রাজধানীতে একই বাসায় ৬ জনকে গলা কেটে খুন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর গোপীবাগে কথিত আধ্যাত্মিক সাধক ও তার ছেলেসহ ৬ জনকে গলা কেটে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার রাতে গোপীবাগের ৬৪/৪ রামকৃষ্ণ মিশন রোডে চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ওই ৬ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- কথিত ইমাম মেহেদীপন্থি আধ্যাত্মিক সাধক লুৎফর রহমান ফারুকী (৬০) তার ছেলে মনির (১৭), বাড়ির কেয়ারটেকার মঞ্জু (৩৫), মুরিদ জাহিদুল (৩০), রাসেল (২৫) এবং শাহীন (২৫)। কথিত এই সাধক ফারুকী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তিন মাস আগে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুকী। নিহত বাকিদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। কী কারণে এবং কারা এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে প্রাথমিকভাবে পুলিশও তা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে ঘটনার পরপরই পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ থেকে নিহত আধ্যাত্মিক সাধকের স্ত্রীসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী একটি মেস থেকেও আটক করা হয়েছে কয়েকজনকে।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, নিহত লুৎফর রহমান ইমাম মেহেদীর অনুসারী পীর বলে পরিচিত। ইসলামবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে এর আগে দু বার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ ২০১২ সালে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে মতিঝিল থেকে ৬ শিষ্যসহ গ্রেফতার করে। সন্ধ্যার পরপরই রোমহর্ষক ৬ খুনের এ ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। শুরু হয় মিডিয়াকর্মীদের ছোটাছুটি। ওই ভবনের পাশের ভবনের দোতলার বাসিন্দা মশিউদ্দিন জানান, সন্ধ্যার পরপরই ওই বাসা থেকে তিনি চিৎকার শুনতে পান। কী ঘটেছে তা দেখার জন্য তিনি ওই বাসায় দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর ভয়ে তিনি আর ভেতরে ঢোকেননি। নিহতের প্রতিবেশীরা বলেছেন, প্রায় তিন মাস আগে বাসা ভাড়া নেয়ার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটে কথিত আধ্যাত্মিক সাধক লুৎফর রহমান ফারুকী কী করতেন তা কেউ জানেন না, প্রতিদিন ভক্তসহ অসংখ্য লোক ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করতেন। ফ্ল্যাটটিতে লুৎফর রহমান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার বরুয়ায়। নিহতের স্ত্রীর বরাত দিয়ে পুলিশ বলেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৮/১০ জন যুবক ওই ফ্ল্যাটে আসে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবকরা অস্ত্রের মুখে তাদের সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। এক পর্যায়ে ওই যুবকরা ফ্ল্যাটে থাকা সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে দেয়। এরপর তারা লুৎফর রহমান ফারুকী ও তার ছেলেসহ ৬ জনকে ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরিবারের বাকি সদস্যদের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। এর পর তার স্ত্রী গোঁঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছু শুনতে পাননি। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার এবং দুটি কক্ষ থেকে ৬ জনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। নিহতের স্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, ঘাতকরা এর আগে কখনোই তাদের ফ্ল্যাটে আসেনি। তবে তাদের দেখলে তিনি চিনতে পারবেন। বাকিদের পরিচয় সম্পর্কে নিহতের স্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের বাইরে সব সময় তাদের ফ্ল্যাটে ৮/১০ জন ভক্ত-অনুরাগী থাকতেন। তাদের বিস্তারিত পরিচয় তিনি জানেন না। তিনি পুলিশকে বলেছেন, তার স্বামী দিন-রাত একটি কক্ষে সাধনায় থাকতেন। অনেক লোক তাদের ওই ফ্ল্যাটে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসতেন। ওয়ারী জোনের উপকমিশনার ইলিয়াস শরীফ জানান, সন্ধ্যায় ওই ৬ জনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
তবে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, লুৎফর রহমান ফারুকী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত ছিলেন। ফারুকীর সাথে হিযবুত তাহরীরের সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো বলে সূত্র দাবি করেছে।