রাজধানির মেয়র আনিসুল হক আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার: লন্ডনে চিকিৎসাধীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না….রাজিউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) তিনি ইন্তেকাল করেছেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানিয়েছে। লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে তার অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেয়রের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিলেন স্ত্রী রুবানা হক। যুক্তরাজ্যে স্বামীর পাশে থাকা রুবানা বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। তার অবস্থা ভালো নয়। তার জন্য দোয়া করুন।’ এর আগে বুধবার তিনি জানিয়েছিলেন, আনিসুল হকের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বসবেন চিকিৎসকরা। স্বামীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির বিষয়ে তিনি আশাবাদী। সাড়ে ৩ মাস ধরে অসুস্থ আনিসুল হকের অবস্থার মাঝে উন্নতি ঘটলেও গত মঙ্গলবার ফের আইসিইউতে নেয়া হয় তাকে। নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডনে যান আনিসুল হক ও রুবানা। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনিসুল হক। তার মস্তিস্কের রক্তনালীতে প্রদাহজনিত সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। আগস্টের মাঝামাঝিতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তির পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিলো তাকে। অবস্থার উন্নতি ঘটার পর গত ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশনে স্থানান্তর করা হয়েছিলো। তার এক মাসের মধ্যে ফের আইসিইউতে নিতে হয় ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হককে। তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হক ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এদিকে আজ রাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এক বার্তায় জানানোয় হয়, মেয়র আনিসুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে  সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটলে তাকে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। গত মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে পূনরায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কাল শনিবার সকাল ১১টা ২০মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছুনো কথা রয়েছে। ওইদিনই বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আনিসুল হকের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে ডিএনসিসি। ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন আনিসুল হক। তিনি একজন উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ এবং টেলিভিশন উপস্থাপক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র। বিজিএমইএর সভাপতি ছিলেন, পরে এফবিসিসিআইর সভাপতি হন। পরবর্তীতে সার্ক চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন আনিসুল হক।

আনিসুল হকের জন্ম চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়। তার শৈশবের বেশ কিছু সময় কাটে তার নানাবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০’র দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনও করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন এবং বিজয়ী হন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে বহাল ছিলেন। আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। তাদের তিনজন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে নাভিদুল হক বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে মোহাম্মদি গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।