রডের বদলে কাবারি: ঠিকাদার মনি সিংকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিলেন আদালত

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দোতলা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ কেলেংকারী মামলার ১ নং  আসামি ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনি সিংকে (৪৫) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দামুড়হুদা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আব্দুল হালিম এ আদেশ দেন।

এদিকে, গত ১০ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক আব্দুল গাফফার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভবনের বেশকিছু নমুনা করেন। ওই নমুনাগুলো গতকাল বুধবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গত ৬ মে ঠিকাদার মনি সিংকে ৱ্যাব-৪ ঢাকা ও দুদক কুষ্টিয়া যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকার মিরপুর পল্লবী বটতলা এলাকার ৪১/১ নং বাসার পঞ্চম তলার একটি ফ্লাট থেকে গ্রেফতার করে। মনি সিং সিলেট কোতোয়ালী থানার ৭৮ সাগরদিঘীপাড় এলাকার জোতিন সিং’র ছেলে। মনি সিং বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া দুদক উপপরিচালক আব্দুল গাফফার জানান, মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য ঠিকাদার মনি সিংকে সুবিধাজনক সময়ে ঢাকা জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) দামুড়হুদা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নওশাদউজ্জামান নমুনাগুলো প্রতিনিধি মারফত খুলনা প্রকৌশল শ্বিবিদ্যালয় ল্যারেটরীতে পাঠানোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত)  মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনি সিং, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ( ইসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ূব হোসেন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী পরিচালক কামাল হোসেনকে আসামি করা হয়। ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট   আব্দুল হালিম মামলাটিকে দুদক কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয় কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফাইটোস্যেনেটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় ও পরীক্ষাগার (অফিস কাম ল্যাবরেটরি) দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভবনটির লুভার নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ৭ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং অভিযোগের সত্যতা পান। ওইদিনই তারা নির্মাণ কাজ বন্ধের আদেশ দেন। গত একমাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।   ৮ এপ্রিল প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ূব হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল, ৯ এপ্রিল ফাইটোস্যেনেটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক (উইং) সৌমেন সাহার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং ১১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপ্রাধন মাহবুবুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সরেজমিনে যান। বিভাগীয় শাস্তিমূলক হিসেবে প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামসকে কিশোরগঞ্জ ও ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ূব হোসেনকে বরগুনায় জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।

২৯ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মকবুল হোসনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।