যে যুদ্ধে কেউ জয়ী নয় কেবলই প্রাণ ক্ষয় : চরম মানবতা বিপর্যয়

 

নয় দিন ধরে ইসরাইলের বিমান ও স্থলহামলায় ২০৫ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে : হতাহতের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু

মাথাভাঙ্গা মনিটর: গাজায়ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। গত নয় দিন ধরে ইসরাইলের বিমান ও স্থলহামলায় এখন পর্যন্ত ২০৫ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছেহাজারের বেশি মানুষ। আর অসংখ্য মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। ফিলিস্তিনেরসশস্ত্র ও রাজনৈতিক সংগঠন হামাসও পাল্টা রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিওএখন পর্যন্ত এ হামলায় একজন ইহুদি ইসরাইলি মারা গেছে বলে বিভিন্নআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন পাল্টাপাল্টিহামলায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানিই বেশি হচ্ছে। তবে হামলাকে কেন্দ্রকরে উভয়পক্ষের জনগণের মধ্যেই ভীতি আর অনিশ্চয়তা কাজ করছে বলে গতকাল বুধবারজাপান টাইমসের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে।

গত মাসে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তিনইসরাইলি কিশোরকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক হামলারসূত্রপাত হয়। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী শত শত হামাস সদস্যকে আটক করে তারজবাব দিতে। এছাড়া ইসরাইলি নাগরিকরা ফিলিস্তিনের এক কিশোরকে জীবন্ত পুড়িয়েমারে। এরপর গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালানো হচ্ছে অভিযোগতুলে অপারেশন প্রটেক্টিভ এজশুরু করে ইসরাইল। বিমান হামলার পাশাপাশি স্থলঅভিযানও পরিচালনা করছে তারা। হামলায় কার্যত গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণতকরেছে ইসরাইলি বাহিনী।গাজায় হামলার বিষয়ে অন্য কারণও রয়েছে বলেমনে করছে বিশ্লেষকরা। ২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের দুই অংশ গাজা ও পশ্চিমতীরের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হামাস ও ফাতাহর হাতে। দীর্ঘদিনের এই বিভেদ দূরেঠেলে গত এপ্রিলে জাতীয় সরকার গঠন করে তারা। এ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নিইসরাইল। জাতীয় ঐক্যের সরকারের সাথে তারা কোনো শান্তি আলোচনায় আসবে নাবলেও জানিয়ে দিয়েছে।

গাজায় ইসরাইলের টানা আট দিনে একতরফা সামরিকঅভিযানের পর মঙ্গলবার মিসরের দেয়া যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয় ইসরাইলিসরকার। যদিও তারা হুঁশিয়ারি দেয়,হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব না মানলে কঠিনজবাব দেয়া হবে। এরপরই হামাস এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে জানায়,তাদের সাথে আলোচনা না করেই এ প্রস্তাব আনা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কোনোচুক্তি ছাড়া হামাস রকেট হামলা বন্ধ করবে না। এই ঘোষণার পর মঙ্গলবারদুপুরের পর থেকে আবারো বিমান হামলা চালানো শুরু করে। গাজা উপত্যকা থেকেরকেট হামলার হুমকি বন্ধে ইসরাইল সেনা অভিযান তীব্র করায় বিরোধ নিরসনেরসম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং মানবিক বিপর্যয় শুধু বেড়েই চলেছে। ফিলিস্তিনেনিহত ২০৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক শিশু ও নারী। একই সঙ্গেফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে,তাদের জনগণের মনোবল ভাঙতে এবংঅস্থিতিশীল করতে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালাচ্ছে ইসরাইল।

ইসরাইলিআগ্রাসনের পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন,তিনি তার দেশ ও জনগণকে রক্ষা করছেন। যেকোনো উপায়ে তা করা হবে বলেজানিয়েছেন তিনি। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ গাজার বসতি এলাকা থেকে রকেটহামলা চালাচ্ছে হামাস। সেনা সূত্র জানিয়েছে,হামাসের নেতাদের ৩২টিলক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। বেসামরিক মানুষ নিহতের ঘটনায়নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করলেও তার অভিযোগ হামাস বেসামরিক মানুষকে ঢালহিসেবে ব্যবহার করছে। একজন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন,হামাসবেসামরিক মানুষকে ব্যবহার করে আমাদের ফাঁদে ফেলতে চায়। এটা যদি তাদের ফাঁদহয় তবে ইসরাইলের সেখানে হামলার অধিকার রয়েছে।

অপরদিকেহামাসেররকেট হামলায় এখন পর্যন্ত একজন ইসরাইলি মারা গেছে। ইসরাইলের আইরন ডোম আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই রকেট হামলার কার্যকারিতা অনেকাংশে নেই বললেই চলে।ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজার১৭ লাখ মানুষকে রক্ষায় জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন,হামলায়গাজার মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে।নিরাপত্তার জন্য সবচেয়েভালো উপায় হলো অস্ত্র বিরতি। কিন্তু এটা এখন অসম্ভব মনে হচ্ছে।আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও কোনো পক্ষই তাদের অস্ত্র ছাড়তে প্রস্তুত নয়।ইসরাইল চাইছে হামাসকে কোণঠাসা করতে যাতে তারা হুমকি দিতে না পারে।

অন্যদিকেহামাস মনে করছে তারা ইসরাইলের উপর আঘাত হানতে এখনো সক্ষম। এরমাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানতৈরি করতে চাইছে।এর আগে ২০১২ সালে ইসরাইলি আগ্রাসনের সময়যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিলো মিসর। তখন মিসরের প্রেসিডেন্ট ছিলেনইসলামপন্থি ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্টআব্দুল ফাতাহ আল সিসি হামাস বিরোধী। তাই তাদের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবইসরাইল গ্রহণ করলেও নাকচ করেছে হামাস।

এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতিতাতে পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধে নেতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছে ইসরাইল ওহামাস। যতোক্ষণ পর্যন্ত একপক্ষ ধ্বংস না হচ্ছে ততোক্ষণ একে অপরের বৈধতা ওঅস্তিত্বকে কেউ স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। এমন মানসিকতা অবাস্তব এবং অসম্ভবও।শুধু দুঃখের বিষয় হলো,যুদ্ধ বিরতির বিষয়টি উভয়পক্ষের অনুধাবনের আগপর্যন্ত আরো প্রাণ ও সম্পদের হানি হবে। আর পরবর্তী একটি সহিংসতা শুরু নাহওয়া পর্যন্ত তাদের মধ্যে এক অস্বস্তির সম্মান বিরাজ করবে।

উল্লেখ্য,১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরথেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের শুরু। এর পর থেকেনিয়মিত সংঘাত হলেও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনেরস্বাধীন সত্তা মেনে নিতে রাজি নয় ইসরাইল। ২০০০ সালের পর থেকে গত ১৪ বছরেইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের ৯০ভাগই ফিলিস্তিনের নাগরিক।