যেভাবে উত্থান নূর হোসেন চেয়ারম্যানের

স্টাফ রিপোর্টার: সিনেমার গল্পের মতোই গাড়ির সামান্য হেলপার থেকে নূর হোসেনের অবিশ্বাস্যউত্থান। কয়েকজন নেতার আশীর্বাদে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে যার আধিপত্য ছিলো, সেই নূর এখন পলাতক। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকেশুরু করে চাঁদাবাজি, মাদকব্যবসা, বালির ব্যবসা, পরিবহনে চাঁদাবাজি সবকিছুইতার নিয়ন্ত্রণে। সেভেন সেভেন নামে এখানে একটি ইটের ভাটা থেকে ৬০ লাখ টাকাচাঁদা নেন। সিদ্ধিরগঞ্জের ওভার ব্রিজের ঠিকাদার মাসুমের কাছ থেকে ৩০ লাখটাকা চাঁদা, সুলতান নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকা, আমিরভান্ডারি নামের ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া ৬০ লাখ টাকা এখন নারায়ণগঞ্জ জুড়ে ঝড়তুলছে। নারায়ণগঞ্জে চুনের ফ্যাক্টরি রয়েছে ২২টি। এসব ফ্যাক্টরি থেকেপ্রতিমাসে দু লাখ টাকা এবং শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ৫০/৬০টি বালির টেক থেকেপ্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে চাঁদাবাজি হয়।

১৯৮৬ সালে সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকায় ইকবাল গ্রুপের ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন নূরহোসেন। পরে ড্রাইভিং শিখে একই গ্রুপে চাকরি করেছেন। ১৯৮৮ সালের দিকেশিমরাইলে আন্তঃজেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম চালু করেনদাইমুদ্দিন নামের এক ট্রাক ড্রাইভার। তার হাত ধরেই নূর হোসেন হেলপারহিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইকবাল গ্রুপে। ১৯৮৯ সালের দিকে দাইমুদ্দিনকে বের করেদিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের দখল নেন নূর হোসেন। ১৯৯২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউপিচেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরবিএনপি প্রার্থী হিসেবে পরবর্তী ইউপি নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীহন নূর হোসেন। নির্বাচিত হয়ে পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯১ থেকে ২০০০সাল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত হয়েওঠেন নূর হোসেন। ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় তার পরিচয় হয় হোসেনচেয়ারম্যান হিসেবে। ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে এলাকার স্থাবর সম্পত্তিবিক্রি, রাস্তায় ইট বিছানোর নামে পরিষদের তহবিল তসরুপ, বন্যায়ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠানো অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী আত্মসাত্সহ নানা অনিয়মেজড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরজাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই গা-ঢাকা দেন হোসেন চেয়ারম্যান। দীর্ঘ চার বছরঅনুপস্থিত থাকায় ২০০৫ সালে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ২০০৯সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তাকে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাঅবহিত করে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটসরকার ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকেঅপসারণ করে। তিনি যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন সেজন্য তাকে ক্রসফায়ারেদেয়ার চেষ্টাও করা হয়। চিঠির পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পুলিশের ওয়েবসাইটথেকে সরিয়ে ফেলা হয় হোসেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেফতারিপরোয়ানা।

হোসেন চেয়ারম্যানের দু ভাতিজা বাদল ও সোহেল ব্যবসায়ীহাবিব হত্যার মামলার ফাঁসির আসামি। চাচাতো ভাই নাছির ওরফে কালা নাছিরপাইকারি মাদকের আড়তদার। এরা প্রত্যেকে নিয়ন্ত্রণ করছে পৃথক পৃথক সন্ত্রাসীবাহিনী। গ্রুপভিত্তিক তাদের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের পক্ষেপ্রত্যেক গ্রুপের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন তার দু ক্যাশিয়ার আলীমাহমুদ ও সানাউল্লাহ। ভাতিজা বাদল ও সোহেল দেখাশোনা করেন তার অবৈধঅস্ত্রের ভান্ডার। নূর হোসেনের ভাই নুরুজ্জামান জজ এলাকায় পরিচিত ছোটমিয়ানামে। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কাঁচপুরের ওয়াপদা কলোনি থেকে শুকরসিপর্যন্ত প্রায় ১০ একর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে পাথর ও বালির ব্যবসা।এছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীতে ট্রলারে চাঁদাবাজির গ্রুপটিও তারই নিয়ন্ত্রণে।