যুদ্ধবিরতি শেষ না হতেই গাজায় ফের হামলা: ঈদ উপলক্ষে হামাসের ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ২৪ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় শেষ না হতেই আবারও গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করেছেইসরাইল। স্থলবাহিনীর ট্যাঙ্কের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি অব্যাহত আছে বিমান, স্থল ও নৌ হামলা। মানবিক অস্ত্রবিরতি প্রত্যাখ্যান করে হামাস রকেট হামলাচালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে রোববার সকালে এক বিবৃতিতে পুনরায় হামলা শুরু করারঘোষণা দেয় ইসরাইল। এর আগে শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি সফলভাবে শেষ হওয়ারপর জাতিসংঘের অনুরোধে বিরতি আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলো ইসরাইলিমন্ত্রিসভা। তবে রোববার দুপুরে হামাস ঘোষণা করে ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ ঘণ্টারযুদ্ধবিরতিতে রাজি। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের তরফ থেকে এর কোনোপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে গাজায় লাশের মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। গত২০ দিনে নিহত হয়েছেন ১০৫০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখগাজাবাসী বাড়িঘর হারিয়েছেন।

রোবাবর সকালে ইসরাইলি হামলায় তিন ফিলিস্তিনিনিহত হয়েছেন। গাজার জরুরি বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদার বলেন, সেন্ট্রালগাজার নিকটবর্তী সীমান্তের কাছে ট্যাঙ্কের গোলার আঘাতে দুজন নিহত হন। এছাড়াখান ইউনিস শহরে বোমা হামলায় অন্যজন নিহত হয়েছেন। পরবর্তীকালে আরও বেশকয়েকটি হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শনিবার ১২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির পররোববার রাতে জাতিসংঘের অনুরোধে আরও ১২ ঘণ্টার বিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল। তবেকয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই ইসরাইলি সেনারা এক বিবৃতিতে জানায়, হামাসযুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে রকেট হামলা অব্যাহত রাখায় তারাও পুনরায় গাজায়হামলা শুরু করতে যাচ্ছে। রোববার সকালে হামাসের ছোড়া কমপক্ষে ৫টি রকেটইসরাইলের ভূখণ্ডে আঘাত করেছে বলে অভিযোগ করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজারবাসিন্দারা জানান, ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই গাজা উপত্যকায় আগের মতো গোলাবর্ষণেরশব্দ শোনা গেছে।বর্ধিত ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টাযেতেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল।

অপরদিকে যুদ্ধবিরতির সময়টিকে নতুনহামলা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরাইল- এই অভিযোগ করেইসরাইলি সেনারা গাজা ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে নাবলে জানিয়েছে হামাস।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮ জুলাই থেকেগাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলের প্রায় একতরফা বর্বর হামলায় এক হাজার ৫০ জনফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার। বাস্তুচ্যুত হয়েছেনপ্রায় দেড় লাখ মানুষ। হতাহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। তাদের মধ্যেঅনেক নারী ও শিশু রয়েছে। বাড়ি-ঘর ছেড়েছেন প্রায় এক লাখ ৮০ হাজারফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরাইল দাবি করেছে, হামাসের হামলায় তাদের তিনবেসামরিক নাগরিক ও ৪৩ সেনা নিহত হয়েছেন।

২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজিহামাস: শনিবার রাতে জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও রোববারবিকেলে হামাস মুখপাত্র সামি আবু জুহরি জানান, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে তারা ২৪ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তিনি জানান, স্থানীয় সময় রোববার বেলা ২টাথেকে যুদ্ধবিরতিতে তারা সম্মত। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এরকোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। গাজার আলজাজিরার প্রতিবেদক স্টেফানি ডেকারজানিয়েছেন, অস্ত্রবিরতির সময় বাড়ানোর বিষয়ে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে কোনোচুক্তির খবর পাওয়া যায়নি।

যেভাবে হামলার শুরু: ইসরাইলি তিন কিশোরকেঅপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলাচালিয়ে আসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল। তবে হামাসতা অস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পরউত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালেরনভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায়যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইলরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদেরসংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও আজও তাদের সেই স্বপ্ন পূরণহয়নি।