যুদ্ধবিরতির দিনে ধ্বংসস্তূপে মিললো সারি সারি লাশ

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: গাজায়শনিবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চলাকালে মিলেছে সারি সারি লাশ। বাড়ি-ঘরেরধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকর্মীরা এদিন প্রায় ১শ’ লাশ বের করে আনেন। এ নিয়েগাজায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইসরাইলের অনবরত বোমা ওক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে এর আগে এসব ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চালানোসম্ভব হয়নি। স্বজনদের খোঁজে এবং নিজেদের বাড়িঘরের অবস্থা দেখতে সেখানে ভিড়করেন বহু গাজাবাসী। এ সময় আপনজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ ও কূটনীতিকদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইল।শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে এর ঠিক আগমুহূর্তেও বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোসে ইয়ালুনবলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময় পার হলে গাজায় স্থল হামলা আরও বাড়ানো হবে। এদিকেদীর্ঘমেয়াদি অস্ত্রবিরতির লক্ষ্যে প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রেরপররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন।

গাজারমেডিকেল সূত্র জানায়, শনিবার যুদ্ধবিরতির ঠিক আগমুহূর্তে গাজারপূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় ইসরাইলি বিমান বাহিনী। এতে বেশকয়েকজন ফিলিস্তিনি হতাহত হন। এর আগে শুক্রবার রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলায়১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চলাকালে উদ্ধারকর্মীরা পুরনোধ্বংসস্তূপগুলোতে উদ্ধার অভিযান চালান। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ভবনথেকে প্রায় ১শ’টি লাশ উদ্ধার করেন। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত হানুনেএকটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছিলো ইসরাইলি সেনারা। দক্ষিণাঞ্চলীয় খানইউনিসের এক বাসিন্দা জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্বেও তারা তাদের ভাঙাবাড়িঘর দেখতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ যুদ্ধবিরতির কিছুক্ষণ আগেও ইসরাইলেরভয়াবহ বোমা হামলায় কেঁপে ওঠে এসব এলাকা। তবুও অনেক স্বজন সেখানে ভিড় করেন।লাশ দেখে আহাজারি করেন তারা। এছাড়া নিজেদের বাড়ি-ঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখতেআসেন অনেকে। তাদের সাজানো-গোছানো অট্টালিকা এখন ইট-বালু আর সুরকির স্তূপ।এসব দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন বাসিন্দারা। একে অন্যকেজড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

গাজার জরুরি উদ্ধার বিভাগেরমুখপাত্র আশরাফ আল কুদার বলেন, তারা শেজাইয়া থেকে ২৫টি, দেইর আল বালাহ ওনুসেইরাত থেকে ১৩টি, উত্তর গাজা থেকে ২৫টি এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনিসথেকে ১৩টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি স্থানে লাশ পাওয়া যায়। এনিয়ে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিনিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজারনারী-পুরুষ ও শিশু। এছাড়া দেড় লাখ ফিলিস্তিনি এ সময় বাড়িঘর হারিয়ে শরণার্থীশিবির বা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অপরদিকে এ সংঘর্ষে হামাসেরহামলায় এ পর্যন্ত ৩৮ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।

জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির স্বল্প সময়ে সেখানকার লোকজন জরুরি কেনাকাটার জন্যরাস্তায় নামেন। কিছু দোকানপাট ও ব্যাংক খুলেছে। ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গুরুতরক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোয় জরুরি সেবা পাঠানো হয়েছে। বিবিসির ইয়ান প্যানেলজানায়, গাজায় ধ্বংসলীলার যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে তা বিস্ময়কর। শেজাইয়াএলাকায় সব ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৬০ ফুট পর্যন্ত উঁচু ধ্বংসস্তূপের ওপর গাড়িউল্টে পড়ে আছে এমন দৃশ্যও দেখা গেছে সেখানে।
মানবিক দিক বিবেচনায়জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ওমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এক সপ্তার জন্য যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানজানিয়েছিলেন। পরে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীবেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পাশাপাশি বলা হয়, অস্ত্রবিরতির সময় গাজায় সন্দেহেরমধ্যে থাকা সুড়ঙ্গ পথে তল্লাশি চালানো হবে। এ সময় হামাসের পক্ষ থেকে হামলাহলে তার জবাব দেবে তেলআবিব।

এদিকে গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান নাহওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। এ অবস্থায় গাজায়দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ফ্রান্সের প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রেরপররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন।তারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।ইসরাইলি তিন কিশোরকে অপহরণ ওহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ জুলাই থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েআসছে ইসরাইল। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করে ইসরাইল।তবে হামাস তাঅস্বীকার করে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পরউত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ নামে এ হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর আগে ২০১২ সালেরনভেম্বরে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল। তখন আট দিনের মাথায় মিসরের মধ্যস্থতায়যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য ইসরাইলরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদেরসংগ্রামের শুরু। এরপর থেকে নিয়মিত রক্ত ঝরলেও তাদের সেই স্বপ্ন আজও পূরণহয়নি।