যশোরের সাবেক এমপি টিপু সুলতান আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতান মারা গেছেন। শনিবার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে প্রয়াতের খালাত ভাই এস এম আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন টিপু সুলতান। গত সোমবার যশোরের বাসায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে। যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট টিপু সুলতান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টিপু সুলতানের স্ত্রী জেসমিন আরা বেগম পেশায় চিকিৎসক। তাদের দুই ছেলে সাদাব হুমায়ুন সুলতান ও জুবায়ের সুলতান। যশোর-২ আসনের এমপি মনিরুল ইসলাম জানান, রোববার সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় টিপু সুলতানের জানাজা হবে। পরে বাদ জোহর জানাজা হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে। এরপর যশোর নিয়ে জেলা শহর ও মনিরামপুরে জানাজার পর খুলনার ডুমুরিয়ার ধামালিয়া গ্রামে তার দাফন হবে।

টিপু সুলতানের জন্ম ১৯৫০ সালের ১৩ ডিসেম্বর, নানা বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়ার জমিদার বাড়ি। তার দাদা বাড়ি নড়াইল জেলার সদর থানার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়াল বাতান গ্রামে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালে বাবা ক্যান্সারে মারা গেলে তাকে যশোরের লোন অফিস পাড়ায় মামা বাড়ি চলে আসতে হয়। যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে দশম শ্রেণিতে পড়াকালে ১৯৬৬ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন টিপু সুলতান। ১৯৬৮ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৯ সালে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে যশোর অঞ্চলের নেতৃত্বে ছিলেন খান টিপু সুলতান। সেই বছরই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ওই বছর গণআন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন এবং ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা আসে। এর কিছুদিন পর যশোরে মুসলিম লীগ নেতা নূরুল আমিনের আগমনের বিরোধিতার কারণে টিপু সুলতানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সামরিক আদালতে মামলা হয়। বিচারে তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধুর সাথে ঢাকায় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বৈঠক হয়। বৈঠকে টিপু সুলতানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে বঙ্গবন্ধু অনুরোধ করলে সেটি প্রত্যাহার হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যশোরে এসে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। পরে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে গুটিকয়েক মানুষ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন টিপু সুলতান।