মোমিনের পর নিমাই গ্রেফতার : চিহ্নিত মাদকসেবী ঘাতকচক্রের সদস্যরা ঘুরছে কৌশলে

 

সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে জিআরপি পুলিশ। গতকাল সোমবার নিমাই ঘোষকে আদালতে সোপর্দ করে সাংবাদিক নিপুল হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদনও জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানি হতে পারে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ঘাতকচক্রের সদস্য পূর্বে গ্রেফতারকৃত মোমিনকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এদিকে জেলা লোকমোর্চা সাংবাদিক নিপুল হত্যা মামলাটি দেখাশোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুজনই মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাদকচক্রের সদস্য। হত্যার সাথে জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েই সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় জিআরপি এদেরকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর আমিরপুর হঠাতপাড়ার শামসুলের ছেলে মোমিন বেশ কিছু তথ্য দিলেও হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে জোর করে মাদক সেবনে বাধ্য করা হয় বলেও প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। পুলিশ হত্যাকারীদের ধরতে নানামুখি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ আমিরপুরের মৃত গোপাল ঘোষের ছেলে নিমাই ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। নিমাইয়ের নিকট থেকে পুলিশ তেমন তথ্য উদ্ধার করতে না পারলেও হত্যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে। সে কারণেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া মোমিনপুর স্টেশনের চিহ্নিত মাদকচক্রের সদস্যদের অধিকাংশই আত্মগোপন করেছে। অবশ্য তাদের কেউ মাঝে মাঝে হঠাত করে প্রকাশ্যে এসেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বলেছে, মাদকসেবী ঘাতকচক্রের সদস্যরা যতো কৌশলেই ঘুরুক, গ্রেফতার এড়াতে পারবে না।

সাংবাদিক নিপুল হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সরোজগঞ্জ বাজার কমিটি ও সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংবাদিক ইউনিট আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এলাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। বক্তারা সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, হত্যাকারীদের হাত যতো লম্বাই হোক, তাদের গডফাদার যতো কৌশলীই হোক- এলাকার মানুষ সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে যেভাবে জেগে উঠেছে তা অব্যাহত রাখতে পারলে ঘাতকচক্রের কেউই পার পাবে না। খুনিদের মুখোশ খুলবেই খুলবে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে দর্শনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দর্শনায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আহুত বিক্ষোভ সমাবেশে সকলকে অংশ নেয়ার জন্য দর্শনা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

আততায়ীর হাতে নিহত সাংবাদিক সদরুল নিপুলের মামলা শুরু থেকেই দেখভাল করবে জেলা লোকমোর্চা। জেলা লোকমোর্চার বিশেষ জরুরি বৈঠকে গতকাল সোমবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলা লোকমোর্চা সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা লোকমোর্চা সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন পিপি। সভায় আলোচনায় অংশ নেন জেলা লোকমোর্চার নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মানিক আকবর, লিটু বিশ্বাস ওজুলহাস মিল্টু। এছাড়াও উন্নয়নকর্মী নুঝাত পারভীন ও শাহনাজ পারভীন শান্তিও এ বিশেষ সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। এছাড়াও এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের যেকোনো কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওইসব কর্মসূচিতে লোকমোর্চা স্বতঃফূর্তভাবে অংশ নেবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সদরুল নিপুল হত্যা মামলাটি শুরু থেকেই জেলা লোকমোর্চার উদ্যোগে দেখভাল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মামলার বাদীপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য লোকমোর্চার আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনগত ভূমিকা রাখবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন,সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিট ও সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির উদ্যোগে গতকাল সোমবার বিকেল৪টার দিকে সরোজগঞ্জ বাজারে মাববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়।মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন,দাতা সদস্য আব্দুল জব্বার সোনা, সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল্লা শেখ,জামায়াত নেতা আব্দুর রউফ,বিএনপি নেতা রাইহান উদ্দীন,সাবেক মেম্বার আ. রহমান,সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন,সহসভাপতি আহম্মদ আলী,সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান,সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন সেতু ক্যাশিয়ার আরিফুল ইসলাম লিন্টু। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিটের চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি এসএম শরীফ উদ্দীন হাসু,প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য শাহ আলম সনি,সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের উপদেষ্টা আক্কাচ আলী, বাজার কমিটির ক্যাশিয়ার শরিফুল ইসলাম,সদস্য শাহাআলম চন্টু ও সিতু জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মোস্তফা মানিক। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে ঘাতক গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

অপরদিকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা মোমিনপুর ইউনিয়ন প্রতিনিধি সদরুল নিপুল হত্যার বিচারের দাবিতে নীলমণিগঞ্জ বাজার কমিটি ও এলাকার যুবসমাজের উদ্যোগে নেয়া ৩ দিনের কর্মসূচি গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। আবারো নতুন করে কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বাজার সূত্রে জানিয়েছে। এরই মধ্যে ৩ দিনের কর্মসূচিতে বাজারের সকল ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণসহ প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ৱ্যালি প্রতিবাদ মিছিল করা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পর নীলমণিগঞ্জ বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে মোমিনপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে অবৈধভাবে গড়ে তোলা মকবুলের মুদিদোকান, জাহিদুলের চায়ের দোকান, বিকাশের সেলুনের দোকান, আরিফ, চান্দু, মোমিন, খাইরুলের চায়ের দোকান, তাইজেলের ভাজার দোকান এলাকাবাসীর সহযোগিতায় জিআরপি পুলিশের হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ করা হয়। গতকাল থানা পুলিশ নীলমণিগঞ্জ বাজারের মৃত গোপাল ঘোষের ছেলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও হেরোইনসম্রাট নিমাইকে গ্রেফতার করেছে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমনপুর ইউনিয়নের নীলমণিগঞ্জের মরহুম নূর মোহাম্মেদের ছেলে সদরুল নিপুলকে গত ২০ মে রাতে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। নিথর দেহ রেললাইনের ওপর ফেলে রাখে ঘাতকচক্র। পরদিন ট্রেনে কাটা খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। সদরুল নিপুলের স্ত্রী নিলিমা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সদরুল নিপুল ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর ইউনিয়ন প্রতিনিধি।