মোবাইল কলরেট নিয়ে বিটিআরসি আগের অবস্থানে

 স্টাফ রিপোর্টার: মোবাইলফোনের কলরেট পরিবর্তনে আগের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কলরেট পরিবর্তনে বিটিআরসির একটি প্রস্তাব আবারও পর্যালোচনার জন্য গত সপ্তাহে ফেরত পাঠিয়েছিলো ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বিটিআরসির ওই প্রস্তাবে একই অপারেটরে (অননেট) কল করার সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ পয়সা আর অন্য অপারেটরে (অফনেট) কল করার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ পয়সা থেকে কমিয়ে ৪৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গত সপ্তাহে বিটিআরসির প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানোর পর গত বুধবার বিটিআরসির নিয়মিত কমিশন বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। বৈঠকে সব দিক বিশ্লেষণ করে বিটিআরসি আগের সিদ্ধান্তই অপরিবর্তিত রেখেছে। আবার ওই প্রস্তাব ডাকা ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হবে। বুধবারের ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কল রেট পরিবর্তনে বিটিআরসির যুক্তি হলো, অননেট-অফনেট কলের ব্যবধান কমিয়ে এনে গ্রাহকদের ফোন খরচ কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এমএনপি (নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল) চালু হলে বাজারে যাতে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও মূল্য হার পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব তৈরির আগে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকেও মতামত নিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অফনেটে সর্বনিম্ন কলরেট এখন কাগজে কলমে ২৫ পয়সা পয়সা হলেও বাস্তবে অননেট কলের সর্বনিম্ন মূল্য ৪০ পয়সা। সেটি ৩৫ পয়সা করা হলে গ্রাহকের খরচ কমবে কারণ তার অফনেট কলের খরচও কমে আসছে। জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্তকে রবি স্বাগত জানায়। এতে গ্রাহক প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হবে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া এ মুহূর্তে আর কোনো দেশে অননেট-অফনেট কলের হিসাব নেই। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কা অননেট-অফনেট কলের হিসাব তুলে দেয়। অননেট-অফনেট কলের জটিল হিসাব ছাড়াও এখানে ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ বা আইসিএক্স নামের একটি মধ্যস্বত্বভোগী স্তরের কারণেও গ্রাহদের ফোন কলের খরচ বাড়ছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশেও এখন আইসিএক্স নেই।

বিটিআরসির বিশ্লেষণে জানা যায়, কল রেট পরিবর্তনের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ছোট অপারেটর থেকে বড় অপারেটরে কল করার খরচ কমবে। যেমন টেলিটক থেকে গ্রামীণফোনে কল করতে বর্তমানে ন্যূনতম খরচ ৬০ পয়সা। সেটি এখন কমে ৪৫ পয়সা হবে। এতে টেলিটকের মতো গ্রাহকসংখ্যায় পিছিয়ে থাকা অপারেটররা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাবে।

অপারেটরদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রামীণফোনের অননেট কলের গড় মূল্য ৪৪ পয়সা, আর অফনেট কলের মূল্য ১ টাকা ৫৬ পয়সা। রবির গড় অননেট কলের মূল্য ৩৯ পয়সা ও অফনেটে ৯১ পয়সা। বাংলালিংকের অননেট ৩৯ পয়সা ও অফনেট ৮৯ পয়সা এবং টেলিটকের অননেট ৩৪ পয়সা ও অফনেট ৮৬ পয়সা। আবার গ্রামীণফোন থেকে ৭৫ শতাংশ কল হয় অননেটে, ২৫ শতাংশ কল অফনেটে যায়। রবির ৫৮ শতাংশ কল অননেটে ও ৪২ শতাংশ কল অফনেটে; বাংলালিংকের ৫৫ শতাংশ কল অননেটে ও ৪৫ শতাংশ কল অফনেটে এবং টেলিটকের ২০ শতাংশ কল অননেটে ও ৮০ শতাংশ কল অফনেটে হচ্ছে।

বিটিআরসি হিসাব করে বলছে, অফনেট কলের জন্য গ্রাহকদের অননেটের চেয়ে এখন তিন থেকে চার গুণ বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, অননেট কলের সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা থেকে ৩৫ পয়সা এবং অফনেট কলের সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ পয়সা থেকে কমে ৪৫ পয়সা হলে এ বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে। তবে বিটিআরসির প্রস্তাবে সর্বোচ্চ কল রেট আগের মতোই ২ টাকা রাখা হয়েছে, যা আগের প্রস্তাবে ১ টাকা ৫০ পয়সা ছিলো।