মোবাইলফোনে চাঁদাবাজিই ছিলো ওর পেশা

চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়া এলাকার ত্রাস কেতুর ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া ভালাইপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার আতঙ্ক ছিলো কেতু। গতপরশু রাতে পুলিশে ক্রসফায়ারে তার পতনে এলাকায় স্বস্তি ফিরলেও একমাত্র সহোদরসহ নিকটজনদের মধ্যে দানা বেঁধেছে ক্ষোভ। তাদের দাবি, কেতু দীর্ঘ দু’বছর ধরে শুধু বাড়ি ছাড়াই নয়, তাকে দীর্ঘ দু’বছর ধরে এলাকাতেই দেখা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়া মোল্লাপাড়ার কেতুকে ঢাকা থেকে ধরে আনার পর পুলিশ গতপরশু মধ্যরাতে অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করে। এ সময় কেতুর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ কেতু আলুকদিয়া তেলপাম্পপাড়ার অদূরবর্তী পুুকুরপাড়ে পড়ে থাকে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। গতকাল বুধবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে নিয়ে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ওর রয়েছে এক ছেলে এক মেয়ে। দু’সন্তানই শিশু।
স্থানীয়রা বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে, এলাকায় কেতু হিসেবে পরিচিত হলেও অনেকেই ওকে আজরাইল বলে ডাকতো। জিবরাইল ওরফে কেতু দীর্ঘ দু’বছর ধরে বাড়ি ছাড়া। ঢাকায় কাজ করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে ওর স্ত্রী দু’সন্তান নিয়ে ফিরে যায় তার বাপেরবাড়ি পাঁচকমলাপুরের শিবপুরে। পুলিশ বলেছে, কেতু ঢাকায় অবস্থান করলেও সে মোবাইলফোনে চরমপন্থি পরিচয়ে এলাকায় একের পর এক ব্যক্তির নিকট থেকে মোটাঅঙ্কের চাঁদা দাবি ও আদায় করে আসছিলো। অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে ওর উৎপাতে। সূত্র বলেছে, সে ধরাপড়ে ঢাকায়। তাকে চুয়াডাঙ্গায় ফিরিয়ে নিয়ে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্রভা-ারের কথা স্বীকার করে। তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ যুদ্ধে কুপোকাত হয় এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ কেতু।
কেতু দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ছোটবেলা থেকেই একটু একগুয়েমি প্রকৃতির কেতু মা হারায় ১৬ বছর আগে। এরপর থেকেই সে খানেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। পিতা দ্বিতীয় বিয়ে করে। সৎ মা বাড়ি আসার পর কেতু ও তার ছোটভাই একরামুল খানেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। একরামুল মাঠে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করলেও কেতু প্রথমদিকে এর ওর ফুটফরমেশ খাটতে দিয়েই পা বাড়ায় অন্ধকার জগতে। গ্রামের অনেকেই জানতো, কেতু চরমপন্থি দলের শীর্ষ নেতা। যে কেতু দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে, সেই কেতু আর কতো বড় নেতাই বা হতে পারে? এরকম প্রশ্ন থাকলেও বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে ছিলো রহস্যাবৃত। গতপরশু পুলিশের বন্ধুকযুদ্ধে ওর পতনের খবরে এলাকাবাসীর কাছে বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। পুলিশ বলেছে, ওর বিরুদ্ধে দুটি খুনসহ একাধিক চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে।