মেহেরপুর বিএনপি-জামায়াতে ৫ শীর্ষনেতা আটক : আন্দোলনের মুখে শ্রমিক নেতা সোনার মুক্তি

বাকিরা জেলহাজতে

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসসহ বিএনপি-জামায়াতে ৫ শীর্ষনেতাকে আটক করে যৌথবাহিনী। আটক অন্য নেতারা হলেন- মেহেরপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক আহসান হাবিব সোনা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদিন ও সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সামছুল আলম এবং জেলা জামায়াতের সাংগাঠনিক সেক্রেটারি মাওলানা রুহুল আমিন। শনিবার দিনগত মধ্যরাতে যৌথবাহিনী নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করে। তবে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ মেহেরপুর জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক আহসান হাবিব সোনাকে ছেড়ে দিয়েছে।

Meherpur Pic-4.

একই রাতে যৌথবাহিনী সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিলে তিনি যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। বাড়ির দোতলা থেকে লাফ মেরে পালানোর সময় তার পা ভেঙে গেছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি চিকিৎসা নিতে জেলার বাইরের একটি ক্লিনিক ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে। তবে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি তার পরিবারের লোকজন। গতকাল রোববার সকালে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, হরতাল অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় এদের আটক করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

এদিকে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন এসব আটকের নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে থামানো যাবে না।

এদিকে সকাল থেকে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোটর শ্রমিকরা জড় হতে থাকে। তারা বেশ কয়েকটি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনাকে আটকের প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া ভোর থেকে মেহেরপুরের সকল রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। শ্রমিক নেতা সোনাকে ছাড়া না হলে তারা বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষনা দেন। খরব পেয়ে মেহেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আন্দোলন সংগ্রামের মুখে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার হামিদুল আলম মোটর মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেনের সভাপতি এ বিষয়ে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, ৱ্যাব কমান্ডার উৎপল, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম রসুল, জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, ট্রাক ও ট্রাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নর সভাপতি আলী কদর, জেলা শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক প্রমুখ। আলোচনা শেষে মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনাকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। মুক্তি পাওয়ার পর বাসস্ট্যান্ডে ফিরে এলে শ্রমিকরা আহসান হাবিব সোনাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।

এ সময় জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম রসুল, মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আব্দুল বাকী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফুয়ান আহমেদ রুপক, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত আহসান হাবিব সোনা, জেলা শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক প্রমুখ। এ সময় আলহাজ গোলাম রসুল বলেন, একজন মানুষ একটি দল করতেই পারে। কিন্তু আমরা মালিক-শ্রমিক এক। তিনি আরো বলেন, মেহেরপুর শান্তিপ্রিয় জায়গা। এখানে হরতাল অবরোধে গাড়ি পোড়ানো হয় না। দোকান-পাট ভাঙচুর করা হয় না। পেট্রোলবোমা মারা হয় না। তাই শান্তিপ্রিয় মেহেরপুরের মালিক-শ্রমিকরা এক হয়ে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, তারা আমাদের সম্মান রেখেছে। তারা আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে শ্রমিকনেতা সোনাকে মুক্তি দিয়েছে। সদস্য মুক্তিপ্রাপ্ত আহসান হাবিব সোনা আবেগঘন কণ্টে বলেন, ভালো লাগে তাই যে যার মতো দল করতে পারে। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে মালিক-শ্রমিকের স্বার্থ। আজ তিনি বুঝতে পেরেছেন। শ্রমিকরা তার সাথে দলমত নির্বিশেষে আছেন। তিনি চিরদিন শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি শ্রমিকদের নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান জানান, মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিকে মুক্তি দেয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শ্রমিক নেতা আহসান হাবিব সোনাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

এদিকে আটক বাকি ৪ বিএনপি-জামায়াত নেতাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মেহেরপুর সদর থানার এসআই ফারুক সাংবাদিকদের জানান, হরতাল-অবরোধে নাশকতার একটি পুরানো মামলায় তাদের আটক দেখিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।