মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন ॥ আ.লীগ-বিএনপির পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী

মেহেরপুর অফিস: ২৫ এপ্রিল মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন। রোববার মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ হয়েছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী পৌর মেয়র তা নিয়ে ভোটার-সমর্থকদের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অবশ্য মেয়র প্রার্থীদের একে অন্যের প্রতি রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। সব ছাপিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ভোটাররাও মতামত প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান রিটন ও বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ^াস দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মেয়রের চেয়ারে থাকা আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। অপরদিকে সাংস্কৃতিককর্মী নিশান সাবের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে দ্বিমুখী না ত্রিমুখি লড়াই হবে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান রিটন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। নৌকা প্রতীক বিজয়ী করতে তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলার দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে কিন্তু এক কাতারে। সবাই চাচ্ছেন নৌকার ভোট। নেতাকর্মীরা বলছেন, ভোট চাওয়ার এই দৃশ্য যদি ব্যালটে প্রতিফলিত হয় তাহলে কাক্সিক্ষত ফল অবশ্যই আসবে। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ^াস পৌর বিএনপি সভাপতি। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে দলীয় কোনো কোন্দলও নেই। সংসদ নির্বাচন না হলেও পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বিজয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ নেতাকর্মীরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলেছেন তারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। তাদেরকে হারিয়ে তিনি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন পৌর মুকুট। সর্বদলীয় ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে অবশ্য গত নির্বাচনের চেয়ে ভিন্ন চিত্র। কেননা দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দুটি বড় দলের প্রার্থীরা। তাই মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর অবস্থান কি দাঁড়ায় তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে। তবে জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী। মোতাচ্ছিম বিল্লাহ বিগত তিন মেয়াদে নির্বাচিত হন। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তিনি ২৫ বছর ধরে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেহেরপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৯৬৫ জন। মেয়র পদে চার জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে শনিবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও ভোটে পেশিশক্তি প্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি প্রার্থী জাহাঙ্গীর বিশ^াস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু। তাদের তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্বাচনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আরো কিছু নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ করেন। এছাড়াও রাতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের নামে হয়রানির অভিযোগও করেন ওই দুই প্রার্থী। নিবিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
তবে পাল্টা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান লিটন বলেন, নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘিœত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন ওই দুই প্রার্থী। আমি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়েও ভালো পরিবেশ বজায় রেখেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আমার তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয়েছে। কারা এ জঘন্য কাজ করতে পারে তা সকলেরই জানা। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সবাই নৌকায় ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে তারা ভীত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। বারবার নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্রে কারা লিপ্ত হয়েছিলো তা সবার জানা আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পে আগুন দিয়ে ভীতি সৃষ্টি করে আবারো নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার পাঁয়তারা চলছে। সব ষড়যন্ত্র ছাপিয়ে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে নানা কর্মকা- বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলা নির্বাচন অফিস ও প্রশাসন। রোববার বিকেল থেকে বিজিবি টহল শুরু হয়েছে। এছাড়াও সোমবার সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে।
মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনের রির্টার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ১৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্র বিশেষ হিসেবে (ঝুঁকিপূর্ণ) চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়-১ ও ২ এবং শেখপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব কেন্দ্র ও কেন্দ্রের আশাপাশে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৩ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের দুটি টহল দল এবং পুলিশের একাধিক টহল দল মাঠে থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আশাবাদী রির্টার্নিং অফিসার।