মেহেরপুর জেলা কারাগার ভোগান্তির শিকার বন্দীদের স্বজনরা স্বাধীনতার বিশেষ ছাড়ে পদেপদে গুনতে হচ্ছে অর্থ!

 

মেহেরপুর অফিস: স্বাধীনতার বিশেষ ছাড়ে ভোগান্তি যোগ হয়েছে মেহেরপুর জেলা কারাগারের বন্দীদের স্বজনদের। আসামিদের সাথে সাক্ষাত করতে এসে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। কারা পুলিশের কাছে দফায় দফায় অর্থও গুনতে হচ্ছে তাদের। এমনকি বাধ্য করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দোকানে মালামাল কিনতে। এজন্য তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ টাকা। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাক্ষাত প্রার্থীদের মাঝে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে অভিযোগ পাওয়ার পর পরই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিশেষ বিশেষ দিনে কারাগারে থাকা বন্দীদেরকে তাদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের পাশাপাশি পরিবারের তৈরি খাবার খাওয়ার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সে মোতাবেক গতকাল রোববার সকাল থেকে বন্দীদের সাথে সাক্ষাত করতে আসেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু তাদের সাথে দেখা করতে এসে পদেপদে কারা পুলিশদের কাছে ভোগান্তির শিকার হন তারা। সরজমিনে দেখা গেছে, কারাগারের ফটকের সামনে মুঠোফোন জমা দিতে গিয়ে ফোনপ্রতি নেয়া হচ্ছে টাকা। তার একটু দূরে জেলা কারাগারের একটি কক্ষে খাতা-কলম নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন কারা পুলিশ। তারা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাক্ষাতপ্রার্থীদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের সাথে অর্থ আদায় করছেন। তারপর খাবার দিতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে আবারও টাকা। তাদের নির্ধারিত দোকানে গিয়ে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। দোকানের সামনে লম্বা লাইন। লাইন থেকে দোকানের নিজেদের পছন্দের মালমাল ক্রয় করছেন তারা। তবে অন্য মালামালের সাথে এক বোতল পানি কেনা বাধ্যতামূলক। আবার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় মালামাল।

কারাগারে তার স্বামীর সাথে দেখা করতে আসা স্টেডিয়ামপাড়ার জেসমিন আরা জানান, তিনি কারাগারে প্রবেশ করতেই তারা মুঠোফোনের জন্য প্রধান ফটকে দায়িত্বরত কারা পুলিশকে দিতে হয়েছে টাকা। তারপর ভেতরে একটি কক্ষে বসে থাকা কয়েক কারা পুলিশকে তার স্বামীর কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। একই পাড়ার নাসিরও তার ছেলের কাছে খাবার নিয়ে এল ওই পরিমাণ টাকা গুনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ করেছেন স্টেডিয়ামপাড়ার ফারুক হোসেন, সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের মিলি খাতুনসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বন্দীদের সাথে সাক্ষাত করতে আসা স্বজনরা।

প্রধান ফটকে দায়িত্বরত কারা পুলিশ মামুন জানান, ওপরের নির্দেশে মোবাইলফোন প্রতি টাকা নেয়া হয়। একটি কক্ষে বসে থাকা কয়েকজন কারা পুলিশের মধ্যে মনোয়ার জানান, তারা কাউকে বাধ্য করে টাকা নিচ্ছেন না। তবে খুশি হয়ে কেউ টাকা দিলে তারা সেই টাকাই নিচ্ছেন। আর দোকানের কর্মরত কারা পুলিশ জানান, ২৬ মার্চ বন্দীরা ভালো খাবার খেয়েছেন। এজন্য তারা একটি কোমল পানির জন্য সাক্ষাতকারীদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জেলা কারাগারের জেলার আক্তার হোসেন বলেন, কারা পুলিশের মধ্যে কিছু অসাধু পুলিশ থাকতে পারে। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।