মেহেরপুর জেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে অফিস করেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা : সরকারি সেবা বাধাগ্রস্ত

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়গুলোয় সরকারি সেবামূলক কাজে গতি নেই। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবনে অফিস কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইউনিয়ন পরিষদে যান না। ফলে সেবা নিতে বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেতে হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে।

ইউনিয়ন পরিষদ অপারেশন নীতিমালা অনুযায়ী, এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের টিউবওয়েল মেকানিক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার, ভেটেনারি ফিল্ড অফিসার ও ভেটেনারি ফিল্ড অ্যাসিসট্যান্ট (কৃত্রিম প্রজননকারী), ইউনিয়ন সমাজকর্মী, আনছার ও ভিডিপি ইউপি দলনেতা ইউনিয়ন পরিষদে ভবনের নির্ধারিত অফিসকক্ষে সেবা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর ৬৩ ধারা মোতাবেক ওই সব অফিসের প্রতিনিধিদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কাজীর গরু কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই অবস্থা বলে জানান কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব। তবে সমাজসেবা দফতরের জন্য কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে কি-না তা জানেন না জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক।

সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ সচিব আজিম উদ্দীন জানান, ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। জেলার কাথুলী, আমঝুপি ও দায়িরাপুর ছাড়া বাকি ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। প্রত্যেকটি ইউপি ভবনে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, সমাজকল্যাণ, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য সাতটি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে আসেননি। আইনি বাধ্যবাধকতায় কক্ষগুলো অন্য কোনো কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে এগুলো অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, সাধারণ মানুষের সরকারি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই বিভাগগুলোর প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট কক্ষে বসার অনুরোধ করা হয়। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভার কার্যাবলিতে সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করে দফতরগুলোয় পত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরকারি অফিসগুলোর অনীহার কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, নতুন উপজেলা পরিষদ গঠন হলে ওই বিষয়ে আবারো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেবা পেতে পরিবার-পরিকল্পনা কিংবা স্বাস্থ্য সহকারীদের পিছে ঘুরতে হয়। ব্যাপকহারে গবাদিপশু পালন হওয়া এ অঞ্চলের খামারি কিংবা পশু পালনকারীদের সেবা নিতে নিয়মিত উপজেলা পর্যায়েই যেতে হচ্ছে। আবার কৃষিক্ষেতের কোনো সমস্যা সমাধানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কক্ষে বসার নীতিমালা আছে। সারাদিন মাঠে ঘুরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা হয়তো সেখানে ঠিকমতো যেতে পারেন না।

এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ওই দফতরগুলোর প্রতিনিধিরা যাতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের নির্দিষ্ট কক্ষে বসে সেবা দেন, এজন্য দ্রুত নির্দেশনা দিয়ে পত্র প্রদান করা হবে। এছাড়া আগামী মাসের (এপ্রিলের) সমন্বয় সভায় সাতটি দফতরের প্রধানদের কাছে অনীহার কারণ জানতে চাওয়া হবে।