মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে যোগদানে ১৯ চিকিৎসকের অপারগতা!

 

 

মাজেদুল হক মানিক: শূন্য পদে ১৯ জন চিকিৎসক মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে যোগদান করার কথা থাকলেও তারা যোগদান করেননি। কুষ্টিয়ায় কর্মরত ১৯ জন চিকিৎসককে বদলি করে গত ৪ আগস্টের মধ্যে এ হাসপাতালে যোগদানের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে ১৩ জনের বদলি স্থগিত এবং বাকি ৬ জন এখনো যোগদান করেননি। ফলে চিকিৎসকের দীর্ঘদিনের শূন্য পদ পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসেও হতাশা দেখা দিয়েছে। আবারো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে জেলার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম।

প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পায় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। এডিবির অর্থায়নে নির্মিত আধুনিক এ হাসপাতালটি শুরু থেকেই জনবল সংকটে ভুগছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্টি হাসপাতালের জন্য চিকিৎসকের পদ ৬৪টি হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১৫ জনের বিপরীতে রয়েছে ৬ জন। এতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। বেশ কয়েকবার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও তদবিরের মাধ্যমে তারা যোগদান না করেই ফিরে যান। সীমান্তবর্তী জেলা ও মানুষ দরিদ্র প্রবণ হওয়ায় এ জেলায় চিকিৎসকরা আসতে চান না। কর্তৃপক্ষের বারবার চিঠি চালাচালিতে সম্প্রতি শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সেমতে গত ৩১ জুলাই খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত এক পত্রে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ১৯ জন চিকিৎসককে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়। গত ৪ আগস্ট যোগদানের শেষ দিন ছিলো। এর মধ্যে যারা যোগদান করবেন না তাদের অব্যহতি বলে গণ্য করা হবে বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ১৯ জনই তদবিরের মাধ্যমে স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকার চেষ্টা করেন। এর প্রেক্ষিতে ১৩ জনের বদলি স্থগিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাকি ৬ জন এখনো যোগদান করেননি কিংবা তাদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানান মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নজরুল ইসলাম।

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে মেহেরপুর জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়ার হার সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিনিই বিভিন্ন গ্রাম থেকে বহির্বিভাগে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যান। আবার চিকিৎসক সংকটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) দ্বারা। ছোট ছোটখাটো সমস্যাতেই রোগী রেফার করা হয় রাজশাহী কিংবা ঢাকা মেডিকেলে। চিকিৎসক নিয়োগের কথা শুনে আনন্দের বন্যা বয়েছিলো জেলাবাসীর মধ্যে। কিন্তু যোগদান না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। আন্দোলনের কথাও ভাবছেন সচেতন নাগরিকরা।

তত্ত্বাবধায়ক ডা. নজরুল ইসলাম আরো জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক কষ্ট করে চিকিৎসাকার্য চালাতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আর চিকিৎসক যোগদান না করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে দায়ী করলেন তিনি।

খুব শিগগিরই হাসপাতালের শূন্যতা পূরণে কার্যকর ব্যবস্থার কথা বললেন জেলা প্রশাসক মাহামুদ হোসেন। পরবর্তীতে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তারা অন্যত্রে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানালেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মামুন পারভেজ দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আদেশ অমান্য করে যারা যোগদান করেননি তার তথ্য বিভাগীয় কার্যালয়ে নেই। খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাসহ আগামী এক সপ্তার মধ্যে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে।