মেহেরপুর গাংনীর চাঞ্চল্যকর সাত খুনের রাতের তিন খুন মামলার রায় সেই লাল্টুসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার আড়পাড়া ও জালশুকা গ্রামের ভয়াল ৭ খুনের ঘটনার রাতের তিন খুন মামলার রায়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক সময়ের শীর্ষ অস্ত্রধারী সংগঠন বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টুসহ ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক টিএ মুসা এ দণ্ডাদেশ দেন।

সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার বাকি আসামিদেরকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। দণ্ডিতরা হলেন-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক সময়ের ত্রাস বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টু। তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে। এছাড়া গাংনী উপজেলার জালশুকা গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে ইউনুছ আলী মাস্টার ও তার ভাই ইকরামুল হক, চাচা ইউসুফ আলীর ছেলে মাসুদুর রহমান ও আক্কাছ আলীর ছেলে আবুল কাশেম।

মামলাসূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ২৯ আগষ্ট দিনগত রাতে গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আলতাফ মোল্লা ও তার তিন ছেলে এবং পার্শ্ববর্তী জালশুকা গ্রামের শওকত আলীসহ তার পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলা আগে নিস্পত্তি হয়। শওকত আলী ও তার পরিবারের তিনজন খুনের মামলায় গতকাল সোমবার ওই দণ্ডাণ্ডাদেশ দেন আদালত।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন জালশুকা গ্রামের নিহত শওকত আলীর ছেলে জালাল উদ্দীন এবং আড়পাড়া গ্রামের নিহত আলতাফ মোল্লার চাচাতো ভাই মহির উদ্দীন বাদী হয়ে বাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান লাল্টুকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় পৃথক দুটি হত্যামামলা দায়ের করেন। মামলার দীর্ঘ তদন্তের পর ১৯৯৬ সালের ৩০ এপ্রিল এজাহার নামীয় আসামিসহ ৩১ জনের নামে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন তৎকালীন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় সরকারি পক্ষের কৌসুলি ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কাজী শহিদুল হক। মামলার বাদী জালাল উদ্দীন ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শহিদুল হক তাদের প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অতি শিগগিরই উচ্চাদালতে আপিল করা হবে।

অপরদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত মাসুদের আইনজীবী একেএম শফিকুল আলম ও লাল্টুর আইনজীবী ইব্রাহিম শাহীন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চাদালতে আপিলের কথা বলেছেন আসামিরা।

আদালত চত্বরে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি: মামলার রায় শেষে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি ইউনুছ আলী মাস্টারের ছেলে বেকসুর খালাস পাওয়া রানা হোসেন ও আমিরুল ইসলাম মামলার বাদী জালাল উদ্দীনকে এবার হত্যার হুমকি দিলেন। মামলার বাদী জালাল উদ্দীন আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে এ দুজন হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, আগে তোর বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছি এবার তোর পালা। তুই এবার মরার জন্য তৈরি থাকিস। জালাল উদ্দীন জানান, তাদের হুমকির বিষয়ে নিরাপত্তার কারণে আদালতে মামলার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি।

জালশুকা গ্রামের মাঠের বন্দোবস্ত নেয়া ৫৭ বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে জালশুকা গ্রামের শওকত মালিথা ও ইউনুছ আলী গংদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। লাল্টু বাহিনী বিরোধের মধ্যে ঢুকে পক্ষ নেয়। সেভেন মার্ডারের কয়েকদিন আগে লাল্টুর ভাইসহ কয়েকজন আড়পাড়া গ্রাম থেকে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এর সতের দিন পর দুটি পরিবারের সদস্যদের জীবনে নেমে আসে সেই ভয়াল ভয়ঙ্কর অন্ধকার রাত। পরিবারের নারী-শিশুদের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় দু পরিবারের সাত পুরুষকে। দু বাড়িতে অন্য কোনো পুরুষই অবশিষ্ট ছিলেন না। যাদেরকে সামনে পেয়েছিলো তাদেরকেই নৃশংসভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ও লাল্টুর ভাইকে ধরিয়ে দেয়ার অপরাধে শওকত মালিথার পরিবারসহ দুটি পরিবারের সদস্যদের ওইভাবে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করে এলাকাবাসী।