মেহেরপুর কলেজ মোড়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে নিহত৪ : আহত৩০

 

মেহেরপুর অফিস: স্মরণকালের ভয়াবয় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২২ জনকে হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতী হওয়ায় ৭ জনকে কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজ মোড়ে দ্রুতগতির একটি যাত্রীবাহী লোকাল বাস উল্টে ঘটনাস্থলেই ওই চারজন নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই চালক ফারুক পালিয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ বাসটি হেফাজতে নিয়েছে। লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী রওশন এন্টার প্রাইজের স্বর্ণা-সাকিব নামের একটি যাত্রীবাহী লোকাল বাস (যার নং- ঢাকা মেট্রো জ-১৪-০৬৫৫) দ্রুতগতিতে মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড়ে বাক ঘোরার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বাসটি রাস্তার পাশে উল্টে যায়। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মেহেরপুর শহরের শিশু বাগানপাড়ার কাজেম আলীর ছেলে বাসের হেলপার মেহেদী হাসান (২৩), বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার পূর্ব মজমপুরের হাজি লিয়াকত আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৮), গাংনীর গাড়াডোব গ্রামের শফির ছেলে শান্ত দর্জি (২৪) ও পথচারী মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের আছের আলীর ছেলে গুড় বিক্রেতা আলী হোসেন (৪০)। একই সময় আহত হন প্রায় ৩০ জন।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। আহতদের মধ্যে গাংনীর খেদুর ছেলে সিরাজ, নাজিমুদ্দিনের ছেলে উজ্জ্বল, আমীর হোসেনের ছেলে ফুরকান, খোরশেদ আলীর ছেলে শরিফুল, মোস্তফার ছেলে দাউদ আলী, নিয়ামত আলীর ছেলে শরিফুল, গাংনী উপজেলার যুগিন্দা গ্রামের আতিয়ারের ছেলে জান্নাতুল, বামন্দীর খোরশেদের ছেলে কুদ্দুস, চেংগাড়ার আব্দুস ছাত্তারের ছেলে শফিকুল, মহাব্বতপুর গ্রামের খবির হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম, পলাশীপাড়ার এনামুলের স্ত্রী রোজিনা, হুমায়ূনের স্ত্রী মালা, ধলার আব্দুর রশিদের স্ত্রী আদুরী, সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গার আলীমুদ্দিনের ছেলে আশরাফুল, আব্দুল মজিদের ছেলে বকুল, শ্যামপুরের মকসেদ আলীর ছেলে নাজিমউদ্দিন, দীঘিরপাড়ার সুজনের স্ত্রী কাজল রেখা, মেহেরপুর শহরের হানিফের ছেলে দেশ, কাঠুর ছেলে সাইদুর, গোপালগঞ্জ জেলার হারানের ছেলে ধনঞ্জয়কে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক পরে মারাত্মক আহত ফুরকন, নাজিমউদ্দিন, শরিফুল, দেশ, কুদ্দুস, আবুল কাশেম ও ধনঞ্জয়কে রাজশাহী, ঢাকা ও কুষ্টিয়া রেফার করেন। পুলিশ নিহত ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠান।

খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শ’শ’ লোক কলেজ মোড় ও হাসপাতাল চত্বরে ভিড় জমায়। দুর্ঘটনাস্থল মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড় এলাকা ও হাসপাতাল চত্বরে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, পৌরমেয়র আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনীন সুলতানা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. গোলাম রসুলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ও রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তাদের পক্ষ থেকে হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেয়া হয়।

এদিকে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দুর্ঘটনার সংবাদে শোক প্রকাশ করেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দেন। এছাড়া আহতদের জীবন বাঁচাতে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল চত্বরে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ব্লাড ব্যাংক খোলা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফুয়ান আহমেদ রূপকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ছেলে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্ত দেয়।

বাদ জোহর প্রশাসনের অনুমতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান সদর থানার এসআই আলী আকবর। মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে তিনি আরো জানান।মেহেরপুর কলেজ মোড় এলাকায় সড়কের পাশে অবৈধ দোকান ও বালির ব্যবসায় জায়গা গড়ে ওঠায় বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।