মেহেরপুরে সরকারি জমি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে বাধা : সাবেক দুই সাব রেজিস্ট্রারকে আটক করেছে দুদক

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে সরকারি খাসজমি জালিয়াতির ঘটনার তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগে মেহেরপুর সদর সাবেক সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মণ্ডল ও শাহিদুর রহমানকে আটক করেছে দুদক। গতকাল রোববার সকালের দিকে দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় থেকে তাদেরকে আটক করে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের মামলায় বিকেলে মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করেছেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে দুই কর্মকর্তাকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। আব্দুর রশিদ ২০১১-১২ সালের দিকে গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত থাকার সময় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি করবে না বলে প্রকাশ্যে তওবা পড়েছিলেন তিনি।

দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল গাফফার জানান, মেহেরপুরের সরকারী খাস জমি জাল দলিলে বন্দোবস্তের ঘটনার তদন্ত করছিলো দুদক। মামলা তদন্তের স্বার্থে ওই জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র তলব করা হয়। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়া হলেও তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছিলেন। বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করছিলেন সরকারী কাজে। তাই গতকাল তাদেরকে কুষ্টিয়া থেকে আটক করে মেহেরপুর সদর থানায় সরকারী কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার আসামি হিসেবে পুলিশ তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে মেহেরপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এদিকে মেহেরপুরের সাবেক দুই সাব রেজিস্ট্রার গ্রেফতার হওয়ায় তাদের পূর্বের কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। জেলায় আলোচিত হয়ে উঠেছে এক সময়ের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আব্দুর রশিদ মণ্ডলকে নিয়ে। গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত কয়েক গুন বেশি টাকা জমি রেজিস্ট্রি শুরু হয়। এতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন অনেকেই। ওই দুর্নীতির সঙ্গে আব্দুর রশিদের নাম সে সময়ে বেশ জোরেসোরে উচ্চারিত হয়েছিলো। তাই আব্দুর রশিদ গ্রেফতার হওয়ায় তার গাংনী অফিসের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার জন্য দুদকের প্রতি অনুরোধ করেছেন সচেতন মহল।

দুদক উপ-পরিচালক আরও বলেন, ২০১১ সালে মেহেরপুরের তৎকালীন সার্র্ভেয়ার (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মজিদ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদিয়া ইসলামের সাক্ষর জাল করে বিভিন্ন মৌজার সরকারি খাস জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেয়ার লক্ষ্যে ১৮টি কবুলিয়ত দলিলে রেজিস্ট্রি করে। যা ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় দুদকের একটি মামলা তদন্তাধীন ছিলো। মামলার আসামিদের বাঁচানোর অসৎ উদ্দেশে দলিলগুলো সরবরাহ না করে মামলার সুষ্ট তদন্ত কাজে জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪’র ১৯(৩) একটি নিয়মিত মামলা করার জন্য দুদক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে কুষ্টিয়া অফিস। পরে মামলাটি দায়ের জন্য সিদ্ধান্ত পেয়ে সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মণ্ডল ও শাহিদুর রহমানের নামে গতকাল সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানান আব্দুল গাফফার।

গ্রেফতার হওয়া সাব রেজিস্ট্রার শাহিদুর রহমান ঝিনাইদহের মহেষপুর উপজেলায় কর্মরত। তার বাড়ি একই জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বলাকান্দর গ্রামে। অপরদিকে আব্দুর রশিদ মণ্ডল বর্তমানে নোয়াখালীতে কর্মরত। তার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুরে।