মেহেরপুরে মতবিনিময়সভায় পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আকুতি : মানবেতর জীবনযাপনের অবসান চাই

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর ও গাংনী পৌরসভাসহ সারাদেশের পৌরসভাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ বেতন-ভাতা সময়মত না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। শহরে গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মরতদের বেতন বকেয়া রয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। এছাড়াও সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা ও পেনশন ব্যবস্থা না থাকায় এক অনিশ্চিত দুঃসহ চাকুরি জীবন পার করছেন তারা। এ অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু মিলছে না সেই কাঙ্খিত মুক্তি। মানবেতর জীবন-যাপন থেকে নিস্কৃতির লক্ষ্যে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন জেলার এই দুই পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। গতকাল শনিবার বিকেলে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়সভায় উপরোক্ত আকুতি প্রকাশ করেন তারা।

মেহেরপুর জেলা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুর পৌর মেয়র আলহাজ মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। মানিক হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা।

অনুষ্ঠানে মূল আলোচনায় পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো বলেন, দিনরাত ২৪ ঘন্টা শহরে অতন্দ্র প্রহরীর মতোই সেবা দেন তারা। একদিন কাজ না করলেই শহরটা ময়লাস্তুপে পরিণত হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন সেবা দেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ রাজস্ব খাত থেকে তাদের বেতন হয়না। পৌরসভার আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে ১১ মাস থেকে ১৯ মাস পর্যন্ত কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়ে গেছে।

পৌরসভা গঠনের ইতিহাস ও বর্তমান পেক্ষাপট উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, দেশের ৩২৬টি পৌরসভায় ২৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। যারা নিরলসভাবে পৌর সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন পৌরবাসীর ঘরে ঘরে। ১৯৮৮ সালে জাতীয় বেতন স্কেল সংশোধনের মাধ্যমে দুর্ভাগ্যবশত স্থানীয় সরকারের কর্মচারীগণ সরকারি কর্মচারী হিসেব গণ্য থেকে বাদ পড়ে। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীগণ সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হয়ে পেশনের আওতাভুক্ত হয়। কিন্তু অদ্যবধি পৌরসভাকে পেনশনের আওতাভুক্ত করা হয়নি।

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে যারা পেনশনের আওতাভুক্ত নয় তাদের পেনশনের আওতাভুক্ত করার বিষয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আজো তা হয়নি। তাই দেশের বিভিন্ন উন্নয়নে রোল মডেল ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নকারী হিসেবে আস্থা অর্জনকারী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্বিসহ জীবন থেকে মুক্তির আকুতি জানানো হয়।

পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাদের শ্রম, মেধা প্রয়োগ করে একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। চাকরির কারণে আয় বর্ধন অন্য কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু বেতন বকেয়ার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দুর্বিসহ সময় পার করছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন চাকরি শেষ করেও পেনশন ও গ্রাচুইটি পাচ্ছে না। চাকরি শেষ করলে আরো অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে হবে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারকে। এর থেকে মুক্তি না মিললে কিভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব তা জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখেন তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন মেহেরপুর ও গাংনী পৌর মেয়রসহ কাউন্সিলরবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গাংনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নবীর উদ্দীন, মেহেরপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল মামুন, মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রশিদ হাসান খান আলো, গাংনী পৌরসভার নূরে আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন গাংনী পৌর মেয়র পত্নী, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী শাহানা ইসলামসহ দুই পৌরসভার কাউন্সিলর ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।