মেহেরপুরে বুটিক কারখানায় শ্রমিকদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় থ্রিপিস

 

 

মাজেদুল হক মানিক: ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের বুটিক কারখানার কারিগররা। এখানকার তৈরি থ্রিপিস যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিশ্রমে কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় থ্রিপিস। জেলা শহরে এ ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন জেলার পোশাক ক্রেতারা।

আর ক’দিন পর ঈদ। ঈদের কেনাকাটায় পোশাক সচেতন মানুষের চাহিদা পূরণে দিনরাত কাজ চলছে মেহেরপুরের বুটিক কারখানায়। শ্রমিকরা বিভিন্ন কারুকাজ দিয়ে তৈরি করছেন মন ভোলানো নানান ডিজাইনের থ্রিপিস। একই পোশাকে এমব্রডারি, হাতের কারুকাজ, প্রিন্টের ছাপ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া তৈরি হচ্ছে বুটিকের ওড়না। আর কাটিং ও ফিটিং তুলনাহীন। যার বেশ কদর রয়েছে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিনই রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় পোশাক সরবরাহ করা হচ্ছে। রোজার মাসে ১৫ হাজার থ্রিপিসের চাহিদা থাকলেও ১২/১৩ হাজার থ্রিপিস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মফস্বল শহরে এ ধরনের কারখানা গড়ে ওঠায় কয়েকশ’বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রানা প্লাজায় ভবন ধসের পর মেহেরপুরের অনেক কারিগর বেকার জীবনযাপন করছিলেন। তাদের অনেকেরই এ কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদেরই একজন সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের মালা খাতুন। তিনি জানান, অভিশপ্ত বেকার জীবন থেকে মুক্তি দিয়েছে এ কারখানা। তিনি সুইং অপারেটর হিসেবে ঢাকার কারখানার সমপরিমাণ বেতন পাচ্ছেন।

ঢাকায় দীর্ঘদিন বুটিক কারখানা পরিচালনার পর অনেকটাই শখের বশে নিজ জেলায় ‘শখ বুটিক’ নামের গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করেছেন রেজাউল হক নামের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তিনি মাথাভাঙ্গাকে জানান, এ ব্যবসায় থেকে দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে নারীদের করুণ অবস্থা দেখেছেন। তাই তাদের কর্মসংস্থান করতেই বিরাট ঝুঁকি নিয়ে মেহেরপুরের মতো একটি সীমান্তবর্তী জেলায় কারখানা স্থাপনের সাহস দেখিয়েছেন। এতে ঢাকার যেসকল প্রতিষ্ঠান তাকে কাপড় সরবরাহ কিংবা পোশাক ক্রয় করতেন তারা অনেকেই প্রথম দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে কারখানা চালুর কয়েক মাসের মধ্যে পোশাকের মান দেখে তারা আবারো ব্যবসায়িক সম্পর্ক অটুট করেছেন। তবে হুজুগে বাঙালির মতো যেনতেন ফ্যাশনেবল পোশাক নয়, সব শ্রেণিপেশার মানুষের ব্যবহার উপযোগী পোশাক তৈরি করে তিনি ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছেন।

জেলা শহরের কাথুলী সড়কের একটি দ্বিতল ভবনে অবস্থিত কারখানাটিতে শ্রমিক রয়েছে আড়াই শতাধিক। দিন-রাত প্রায় সমানে কাইচির কচ কচ শব্দে মুখরিত কারাখানাটির কাটিং বিভাগ। দায়িত্বরত কাটিং মাস্টার মনিরুল ইসলামের বাড়ি মেহেরপুর শহরে। তিনি জানান, এই মালিকের ঢাকার কারখানায় তিনি দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত ছিলেন। এখন বাড়ির দুয়ারে কারখানা তাই আনন্দের শেষ নেই।

সুইং অপারেটর আনোয়ারা খাতুন জানান, বাড়ি থেকে কারখানায় এসে কাজ করি। তাই ঢাকা শহরের থেকে অনেক খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। এবারের ঈদ বেশ ভালোভাবে উপভোগ করবো।

শুধু মেহেরপুর জেলারই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানের কিছু শ্রমিক কাজ করছেন ওই বুটিক কারখানায়। প্রিন্টিং মাস্টার সুমন মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তিনি জানান, ঢাকার যানজট, অতিরিক্ত বাসা ভাড়া, নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় বেতনের সাথে খরচের সঙ্গতি ছিলো না। এখানে নিত্যপণ্যের দাম কমের পাশাপাশি সব কিছুতেই সাশ্রয় হচ্ছে। ঢাকার চেয়ে বেশি অর্থ বাড়িতে দিচ্ছেন।

জেলার বাজারেও বিক্রি হচ্ছে ‘শখ বুটিক’র তৈরি থ্রিপিস। মেহেরপুর শহরের সোহানা সুপার মার্কেটের ফ্যাশন ওয়ানের ইমরান হোসেন জানান, রোজার মাসে তিনি ৫ শতাধিক থ্রিপিস বিক্রি করেছেন। জেলায় উৎপাদন তাই বাইরের একই মানের পোশাকের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে ‘শখ বুটিক’ থ্রিপিস। এতে ক্রেতাদের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সন্তুষ্টি অর্জন করা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতার প্রথম পছন্দ ওই থিপিস।