মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে

হাট না থাকায় শহরের প্রধান সড়কের যত্রতত্র ঘাস বিক্রি হচ্ছে : বাড়ছে জনদর্ভোগ

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। গো-খাদ্যের সঙ্কট ও লাভজনক হওয়ায় চাষিরা ঘাসচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ঘাসচাষে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি এক শ্রেণির মানুষ অল্প পুঁজি নিয়ে ঘাসের ব্যবসা করে ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে মেহেরপুর শহরের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ শহরে ঘাস বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কারণ জায়গা নেই। ব্যস্ত সড়কের ওপর ঘাস বিক্রির কারণে এক দিকে যেমন রাস্তা নোংড়া হচ্ছে অন্য দিকে দিনের পর দিন ঘটে যাচ্ছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ঘাসচাষের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে জেলায় বিভিন্ন মাঠে শ’ শ’ বিঘা জমিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকারের ঘাস থাকলেও নেপিয়ার ঘাসচাষে অধিক লাভ করা যায় বলে চাষিরা মনে করেন। তাই তারা নেপিয়ার ঘাসচাষ করে থাকেন। বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বছরে ৩৬ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করা যায়। ওই ঘাস নিজে খুচরা বিক্রি করলে প্রতি বিঘা ঘাস ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। সার, বিষ, বীজ আর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষিরা ধানচাষ করে লাভবান হতে পারছেন না। তাই তারা সবজি চাষের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। ধানচাষ কমে যাওয়ায় বিচালির দাম বৃদ্ধি তদুপরি মাঠের পর মাঠ সবজি চাষের জন্য মানুষ গোবাদি পশু বাড়ি থেকে বের করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে খামার মালিকরা ও সৌখিন গবাদিপশু পালনকারীরা খাস-পাতা কিনে তাদের গবাদি পশু পালছেন। বর্তমানে খৈল, ভূষি আর বিচালির দাম আকাশ ছোঁয়া। বিচালির চেয়ে সবুজ ঘাসে পুষ্টি আর খাদ্যগুন বেশি। ঘাস খেলে গাভি তুলনা মূলকভাবে দুধ অনেক বেশি দেয়। তাই খাদ্য ঘাটতির প্রতি অভিযোগ না করলেও গো খাদ্যের জন্য ঘাসের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সৌখিন গোবাদি পশু পালনকারী ও খামার মালিকরা। ঘাসের চাহিদাকেও কাজে লাগাচ্ছেন জেলার ঘাসচাষিরা।

এদিকে বাগান করা লাভ জনক হওয়ায় জেলার  শ’ শ’ বাগানকারী ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ওই সব বাগানের ভেতরে ঘাস লাগিয়ে সাথী ফসলের কাজটিও সেরে নিচ্ছেন। এতে বাগানের গাছ ফল দেয়ার আগেই বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। মেহেরপুরে উৎপাদিত নেপিয়ার ঘাস জেলায় বিক্রির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ঘাস জেলা শহরের হোটেল বাজার, নতুনপাড়া স্কুল মোড়, কোর্টমোড়, বড়বাজার, কাথুলী বাসস্ট্যান্ড, ওয়াপদা মোড়, কলেজ মোড় ও পার্কের সামনে, সদর উপজেলার বামনপাড়া, আমঝুপি ও বারাদী বাজার, মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, কেদারগঞ্জ, মহাজনপুর ও কোমরপুর বাজারে এবং গাংনী উপজেলা শহরের হাসপাতাল ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, উপজেলার জোড়পুকুরিয়া, বামন্দী ও গাড়াডোব বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

ঈদগাপাড়ার ঘাসচাষি আশরাফুল জানান, তিনি নিজেই ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসচাষ করেছেন। আর ব্যবসার জন্য আরও ২৫ বিঘা জমির ঘাস অন্য চাষির কাছ থেকে কিনেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ করে ঘাস রোপণ করে প্রথম ৩ মাস পর থেকে ঘাস কাটা যায়। এরপর প্রতি ২ মাস অন্তর বছরে ৬ বার ওই জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরও বলেন, প্রতিবার মাত্র ২ হাজার টাকার সার-পানি দিলে ৬ হাজার টাকার ঘাস বিক্রির জন্য বাজারে নেয়া যায়। মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ দিঘীরপাড়ার ঘাসব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪/৫ বছর ধরে ঘাসের ব্যবসা করছি। দিনে দিনে মেহেরপুরে ঘাসচাষ বেশি হচ্ছে। ঘাসের ব্যবসায়ীও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুর ওয়াপদাপাড়া, ময়ামারি ও সিঙের মাঠসহ জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মাঠে নেপিয়ার ঘাসচাষ হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শহরের পাশের ক্ষেত থেকে ৪ টাকা আটি দরে ঘাস কিনে এনে বিক্রিও জন্য শহরে বসি। ৫টাকা আটি দরে ওই ঘাস বিক্রি করি। প্রতিদিন কম পক্ষে ২শ’ আটি ঘাস বিক্রি করি। ওয়াপদাপাড়ার ঘাস ব্যবসায়ী মুক্তি বলেন, অন্যান্য ব্যবসায় পুঁজি বেশি লাগে। শারীরিক পরিশ্রমও করতে হয় অনেক বেশি। সেই তুলনায় ব্যবসায় কম পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ করা যায়। তাই ঘাসের ব্যবসা শুরু করেছি। ৪শ’ টাকায় একশ’ ঘাসের আটি কিনে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন তিনি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ আটি নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে থাকেন।

এদিকে শহরের প্রধান সড়কে যত্রতত্র ঘাসসহ গো-খাদ্য বিক্রি হওয়ায় শহরের পরিবেশ যেমন নোংড়া হচ্ছে তেমনি প্রতিনিয়তই ঘটছে যানজটসহ ছোট বড় পথ দুর্ঘটনা। এর ফলে বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা। জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছে শহরবাসী। এ ব্যাপারে মেহেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, পৌরসভার পক্ষ থেকে মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশের একটি স্থানে ঘাসের হাট করার জন্য জায়গা দেখিয়ে দিলেও তা কাজে আসেনি। ঘাস বিক্রেতারা শহরের প্রধান সড়কের ওপর যত্রতত্র ঘাস বিক্রির জায়গা করে নিয়ে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। জন দুর্ভোগরোধে পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ঘাসব্যবসায়ীরা ঘাসের ব্যবসা করবেন এমন প্রত্যাশা সচেতন শহরবাসীর।