মেহেরপুরে তালশাস বিক্রির ধুম

 

 

মহাসিন আলী: আম, জাম ও লিচুর মতো জনপ্রিয় একটি ফল তালশাস। মধুমাসের এ ফলটি ছোট-বড় সকলের কাছে খুবই প্রিয়। মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, গ্রাম-গঞ্জের হাটে-বাজারে ও বিভিন্ন সড়কের ধারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা তাল থেকে শাস বের করে বিক্রি করছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তালশাসের দাম বেশি হলেও বিক্রির ধুম লেগেছে।

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। এ মাসের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে তালশাস অন্যতম। বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রৌদ্র এ ফলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান কিংবা গ্রামের হাট বাজারে ব্যবসায়ীদেরকে জালি তাল নিয়ে একটি একটি করে কেটে শাস বের করতে দেখা যায়। রসাল এ শাসের চাহিদার কারণে ব্যবসায়ী তাল হতে শাস বের করার সাথে সাথে তা বিক্রি হয়ে যায়। অনেক সময় ক্রেতাকে তালশাসের চাহিদা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

অনাবৃষ্টিকে কারণ দেখিয়ে তালশাস ব্যবসায়ীরা এ বছর প্রতিটি শাস ২ টাকা করে বিক্রি করছেন। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। দাম বেশি হলেও মেহেরপুর এলাকায় তালশাসের ক্রেতার কমতি নেই। মধু মাসের এ ফল বলে কথা। নরম রসাল জেলির মতো তালশাসে রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণ। কেউ খুব নরম আবার কেউ একটু শক্ত তালশাস খেতে পছন্দ করেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের জিনারুল ইসলামের ছেলে জয়নাল কয়েক দিন ধরে মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বিএম কলেজ সংলগ্ন নজরুল সড়কের পাশে বসে তাল কেটে শাস বের করে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, কয়েক বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে তালশাস বিক্রি করি। গ্রাম থেকে প্রতিটি তাল গাছ (ফল হিসেবে) ৩০০থেকে ৪০০টাকায় কিনি। শহরে নিয়ে ওই তাল থেকে শাস বের করে বিক্রি করি। একটি গাছের তাল কেটে শাস বের করে বিক্রি করতে ২ দিন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ দিনও সময় লাগে। প্রতিটি গাছের তালশাস বিক্রি করে ৮০০থেকে ১২০০টাকা পাওয়া যায়। তবে এ বছর পানি না হওয়ায় সব তাল থেকে শাস পাওয়া যাচ্ছে না। গেলো বার প্রতিটি তাল থেকে ৩-৪টি করে শাস পাওয়া গেছে। এবার ২-৩টির বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এমনটিও হয়েছে কোনো কোনো তাল থেকে একটি শাসও পাওয়া যায়নি। যে কারণে খরচ পুষিয়ে নিতে প্রতিটি শাস ২ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

জয়নালের মতো অনেকে মেহেরপুর শহরের গো-হাট, সরকারি কলেজ মোড়, তাহের ক্লিনিক মোড়, হাসপাতাল মোড়, বড় বাজার, কাথুলী বাসস্ট্যান্ড, মল্লিকপুকুর পাড়, স্টেডিয়াম এলাকা, কোর্ট মোড়, থানা রোড, বোসপাড়াসহ প্রায় অর্ধশত স্থানে তালশাস বিক্রি করছেন। এদের অনেকে জানালেন এ ব্যবসা তারা এখনও এক মাস করবেন। মরসুমি এ ফলের ব্যবসা করে এ সময়টুকু তারা তাদের পরিবারপরিজন নিয়ে ভালো থাকেন।

গ্রীষ্মের মধুমাস জ্যৈষ্ঠে তাল থেকে শুধু শাস খাওয়া নয়। শরতে পাকা তাল থেকে তৈরি তাল পিঠা, তাল বড়া, তাল ক্ষিরসহ নানা ধরনের খাবার অনেকের কাছে প্রিয়। পাকা তালের আটি থেকে হেমন্তে আরেক ধরনের শাস খাওয়া চলে। এছাড়া বসন্তে পাই সুমিষ্ট তাল রস, তালের গুড়-পাটালি। বছরের প্রায় সব সময় তাল থেকে কোনো না কোনো খাবার পাই আমরা। এছাড়া তাল গাছ থেকে ডোঙা ও ঘরের আড়া তৈরি করা হয়। নানা গুণের এ তালগাছ উজাড় হচ্ছে। তাই তালগাছ রোপণ ও তাদের রক্ষায় আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে মেহেরপুরের সচেতনমহল।