মেহেরপুরে চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ভাল বিয়ের পর সংসারে আগুন : বুকের জ্বালা নভানোর প্রচেষ্টা

 

মেহেরপুর অফিস: চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে বুকের জ্বালা জুড়ালো মর্জিনা (৩২) নামের এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কুঠিপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর ছেলে, ভাই ও পিতা গৃহবধূকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে।

জানা যায়, মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের কুঠিপাড়ার ফকির মোহাম্মদের মেয়ে মর্জিনা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয় সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের বলিয়ারপুর গ্রামের হয়রত আলীর সাথে। এক যুগের সংসার জীবনে তাদের ঘরে আসে এক সন্তান। নাম রাখা হয় সুজন। সুজন বর্তমানে স্থানীয় উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্বামীর সাথে ঘর করা অবস্থায় বাবার বাড়ি উজলপুর গ্রামের প্রতিবেশী যুবক ২ সন্তানের জনক উজ্জ্বলের সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে মর্জিনার। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথম স্বামী হযরত আলীর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়। মর্জিনা ঘর বাঁধে ২ কন্যাসন্তানের জনক প্রেমিক উজ্জ্বলের সাথে। এরপর থেকে শুরু হয় নতুন সংসারে অশান্তি। ছেলে সুজনকে নানাবাড়ি উজলপুর গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয় ।

পাশাপাশি দুটি পরিবারে অশান্তি দেখে ভাই ইজারুল তালাক নিয়ে মর্জিনাকে পাঠায় ঢাকার একটি গার্মেন্টসে। এরপরও মোবাইলফোনে চলতে থাকে উজ্জ্বল-মর্জিনার প্রেম। তিন মাস আগে মর্জিনা ঢাকা থেকে চলে আসে মেহেরপুরের উজলপুর গ্রামে। পুনরায় উজ্জ্বলের সাথে বিয়ে হয় মর্জিনার। গ্রামে ফেরার পর আবারও শুরু হয় সংসারে অশান্তি। গৃহের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। গায়ে হাত ওঠে মর্জিনার। সোমবার স্বামী উজ্জ্বল তাকে বেধড়ক মারপিট করে। মঙ্গলবার সকালে শাশুড়ি ও স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দেয় মর্জিনা। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মর্জিনার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে মর্জিনার ভাই ও বাবাসহ স্বজনরা ছুটে আসে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে। নিহত মর্জিনার একমাত্র ছেলে সুজন, ভাই ইজারুল ও পিতা ফকির মোহাম্মদ অভিন্ন সুরে বলেন, স্বামী উজ্জ্বল সোমবার মর্জিনাকে বাঁশ দিয়ে মারে। আবার মঙ্গলবার সকালে স্বামী ও শাশুড়ি মারধর করে এবং এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেয় মর্জিনাকে। মারাত্মক আহত মর্জিনাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মেহেরপুর সদর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই জিয়া জানান, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের পিতা ফকির মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিহতের স্বামী উজ্জ্বল, শাশুড়ি খালেছা খাতুন ও শ্বশুর রেজাউল ফকিরের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।