মেহেরপুরে আজ অর্ধদিবস হরতাল : টায়ারে শিবিরের আগুন

প্রত্যাখ্যানে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ : নাশকতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে র‌্যাব-পুলিশ

 

 

মেহেরপুর অফিস: আজ রোববার আধাবেলা হরতাল সমর্থনে গতরাতে মেহেরপুর শহরের বড়বাজার এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে শিবিরকর্মীরা। এতে শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই মেহেরপুর শহর ছাত্রলীগের উদ্যোগে শহরের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, নাশকতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব। এরপরও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানায়, জামায়াতের ডাকা আধাবেলা হরতাল পালনে গতাল শনিবার রাত আটটার দিকে মেহেরপুরে শহরের বড়বাজার পৌরসভার পাশে হুদাপ্লাজার মোড়ে তিনটি মোটরসাইকেলে ৬/৭ জন হেলমেট পরিহিত শিবিরকর্মী নামে। তারা একটি টায়ার জ্বালিয়ে হরতাল সমর্থনে স্লোগান দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় পুলিশের দুটি দল তাদের পিছু নিলেও তাদের ধরতে পারেনি। এতে শহরের বড়বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে শহরের হোটেল বাজার এলাকায়। আতঙ্ক সৃষ্টি হয় হোটেল বাজারেও। ওই সময় অনেককে দোকান পাট বন্ধ করতে শোনা যায়। এর মধ্যদিয়ে শিবির নেতাকর্মীরা হরতালে রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশসহ সংশিষ্টরা।

ঘটনার পরপরই মেহেরপুর শহর ছাত্রলীগের উদ্যোগে হরতাল প্রত্যাখ্যানে শহরে হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেনের নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শহরের হোটেল বাজার মোড় থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে হোটেল বাজার মোড় এলাকায় শেষ হয়। ওই সময় শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফুয়ান আহমেদ রূপক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বারিকুল ইসলাম লিজন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম আনন্দ, সাংগাঠনিক সম্পাদক রিংকু, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরুত-ই খোদা রুবেল, ছাত্রলীগ নেতা দুলাল প্রমুখ। বিক্ষোভ মিছিল থেকে জামায়াত-শিবির ও হরতালের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়।

সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরও বলেন, ইস্যুবিহীন ওই হরতাল ছাত্রলীগ মানে না। যেকোনো মূল্যে হরতালের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হবে। সকাল থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানান ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

এদিকে হরতালে নাশকতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব। জেলার বিভিন্ন থানা ও ক্যাম্পের পুলিশ সদস্য ছাড়াও রিজোর্নাল রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ)  শতাধিক সদস্য ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলায় অবস্থান করছেন। মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়ে আরও বলেছেন, যেকোনো মূল্যে জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ। প্রয়োজনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী ভারপ্রাপ্ত আমির মাও. তাজউদ্দীন খানসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার মেহেরপুর জেলায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে জামায়াত। ওই হরতালে রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে ছাত্রশিবির। রাজপথে থেকে ওই হরতাল প্রতিরোধ করবে ছাত্রলীগ। হরতালে নাশকতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব। সব মিলিয়ে আজকের হরতালে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে যাচ্ছে, না অতীতের মতো মেহেরপুর শান্ত থাকবে তা নিয়ে মেহেরপুরের সাধারণ মানুষ যেমন চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে তেমনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কে থাকছে মেহেরপুরের অধিকাংশ মানুষ।