দামুড়হুদার লক্ষীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার : মানববন্ধন

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার লক্ষীপুর উম্বাত বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। সদ্য গঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছে ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা। অবৈধ কমিটি মানিনা মানবোনা বলে ম্লোগান দিতে থাকে ছাত্রছাত্রীরা। নিয়মনীতি মেনেই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেও ভিন্নমত পোষণ করেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি গোপনে করা কমিটি বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে একটি শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটি গঠন। নতুন কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত ক্লাসবর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে এরমধ্যে যদি নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন করার পরদিন অর্থাৎ গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধনে অংশ নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকার সচেতন অভিভাবকমহল।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের দলকালক্ষ্মীপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা হয়। নাম দেয়া হয় উম্বাত আলী বিশ্বাস নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যায়নরত বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম হোসেন। বিদ্যালয়ে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একাডেমিক সুপারভাইজার রাফিজুল ইসলামকে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করার পর গত ৫ মে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল মোতাবেক গত মঙ্গলবার ছিলো সভাপতি নির্বাচনের দিন। ওই দিন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যের মধ্যে আসাদুজ্জামান ওই গ্রামের মিজানুর রহমান লিটনকে সভাপতি নির্বাচনের জন্য নাম প্রস্তাব করেন। এ সময় ৪ জন অভিভাবক সদস্য ওই প্রস্তাব সমর্থন জানানোর পর অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সিলেকশনের মাধ্যমে মিজানুর রহমান লিটনকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এবং তা রেজুলেশনভুক্ত করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গতকাল বুধবার সকালে ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসে এবং ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করতে থাকে। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রছাত্রীরা জানায় সিলেকশনের মাধ্যমে গোপনে যাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন তাকে পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় আমরা ক্লাসে ফিরবো না। এরপর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একত্রিত হয়ে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেয় এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে বলতে থাকে অবৈধ কমিটি মানি না মানবো না। সিলেকশনের কমিটি বাতিল কর করতে হবে। এ সময় ছাত্র ছাত্রীদের সাথে এলাকার বেশ কিছু অভিভাবক কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি দশম শ্রেণির ছাত্র পাপন, সাধারণ সম্পাদক ৯ম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির, সদস্য পিপাসা এবং মনজিলুর রহমান অভিন্ন ভাষায় তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাদের দাবি গোপনে করা কমিটি বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার মধ্যদিয়ে একটি শক্তিশালী ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা। নতুন কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত ক্লাসবর্জন। ৭ দিনের মধ্যে নুতন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলেও দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়েছেন ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল প্রতিটি ক্লাসে ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের শোনানো হয়েছে। অভিভাবকদেরকেও নোটিশের মাধ্যমে জাননো হয়েছে। অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসে না। পনের দিন আগে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে এবং প্রিসাইডিং অফিসারের উপস্থিতিতে পূর্ব নির্ধরিত দিনেই সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস বর্জনের ঘটনার পর আমি কয়েকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে গিয়েছিলাম। সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, রেজুলেশন পাঠানো হয়ে গেছে এখন আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এ উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মিজানুর রহমান লিটন এবং বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন এ দুজনের দু’পক্ষে অবস্থানই এ পরিস্থিতির মূলকারণ। তারা একমত হলে কোনো সমস্যা থাকতো না। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য হামিদুল ইসলাম বলেন, আমি যখন একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কিছুই জানতে পারিনি তখন সাধারণ অভিভাবকরা কীভাবে জানলো জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, মেম্বারের জানানোর দরকার নেই। এ কথার মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে শ শ লোকজনের মধ্যে তিনি আমাকে চরমভাবে অপমান করেছেন। এ বিষয়ে নির্বাচিত সভাপতি মিজানুর রহমান লিটনের ছোট ভাই আলমগীর হোসেন বলেছেন, এলাকার একটি মহল যারা স্কুলের মঙ্গল চাই না তারাই ছাত্রছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।