মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ৯ ইউপিতে আ.লীগ ৪ বিএনপি ৪ ও আ.লীগের বিদ্রোহী ১টি বিজয়ী

গাংনী প্রতিনিধি: দুয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ৯টি ইউপিতে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা। নির্বাচনে আ.লীগ ৪, বিএনপি ৪ ও স্বতন্ত্র (আ.লীগের বিদ্রোহী) একটিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। ভোট পোল হয়েছে ৮৫ ভাগের ওপরে। কাথুলী ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট গণণার কারচুপির অভিযোগে তুলে কয়েকটি কেন্দ্রে পুনঃগনণার আবেদন করেছেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

রাইপুর ইউপিতে আ.লীগের গোলাম সাকলায়েন ছেপু ৫৬২ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ২২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান আলফাজ উদ্দীন কালু (ধানের শীষ) ৪ হাজার ৬৫৮ ভোট এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ইসমাইল হোসেন (মোটরসাইকেল) ২ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়েছেন। কাথুলী ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান রানা ২৪৭ ভোটে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৫৮। আ.লীগের বিদ্রোহী শিহাব উদ্দীন (দুটি পাতা) ৭ হাজার ১১১ ভোট এবং বিএনপির জিয়াদ আলী (ধানের শীষ) ৬০৫ ভোট পেয়েছেন। তবে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগে শিহাব আলী গতরাতেই নির্বাচন অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি কেন্দ্রে শিহাদ আলীর এজেন্টেদেরকে জোরপূর্বক ফলাফল শিটে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রকৃত ফলাফল আড়াল করে মিজানুর রহমান রানাকে বিজয়ী করতে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগে শিহাবের। বিষয়টির পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাচন অফিসার সরওয়ার হোসেন।

রাইপুর ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী গোলাম সাকলায়েন ছেপু ৫৬২ ভোটে জয়লাভ করেছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৫ হাজার ২২০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলফাজ উদ্দীন কালু (ধানের শীষ) ৪ হাজার ৬৫৮ ভোট আ.লীগের বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র ইসমাইল হোসেন ২ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়েছেন। ধানখোলা ইউপিতে আখেরুজ্জামান ২ হাজার ২০৪ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৯৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক (নৌকা) পেয়েছেন ৯ হাজার ৭৮৫ ভোট। জামায়াত সমর্থিত মশিউর রহমান সাবান (চশমা) ২ হাজার ১২৮ ভোট ও স্বতন্ত্র গোলাম সরওয়ার পেয়েছেন ৫০২ ভোট।

সাহারবাটি ইউপিতে গোলাম ফারুক ১ হাজার ৯৭৭ ভোটে জয়লাভ করেছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮ হাজার ২২৩ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বাসীরুল আজিজ হাসান (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৬ হাজার ২৪৬ ভোট। ষোলটাকা ইউপিতে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি ১ হাজার ৯৬৭ ভোজে জয়ী হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী আয়ুব আলী (আনারস) ৪ হাজার ৩৩৮ ভোট ও আ.লীগ প্রাথী আমিনুল কবির দেলবার (নৌকা) পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৭ ভোট।

মটমুড়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোহেল আহম্মেদ ১ হাজার ৫০৭ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৪৬৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হামিদুল হক (ধানের শীষ) ৮ হাজার ৯৬১ ও আবুল হাসেম (নৌকা) ৩ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়েছেন। বামন্দী ইউপিতে আ.লীগ প্রার্থী শহিদুল ২ হাজার ১২০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৩১৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী হবিবুর রহমান হবি (আনারস) ৫ হাজার ১৯৩ ভোট ও বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলাম (ধানের শীষ) ৩ হাজার ৮৬ ভোট পেয়েছেন।

কাজিপুর ইউপিতে বিএনপি প্রার্থী রাহাতুল্লাহ ২৭২ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৯০৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত সমর্থিত আলম হুসাইন (চশমা) ৫ হজার ৬৩৫ ভোট। আ.লীগের বিদ্রোহী আব্দুল আলিম (আনারস) ৩ হাজার ৭১৪ ভোট ও আ.লীগ প্রার্থী আবু নাতেক (নৌকা) ২ হাজার ৫৪৬ ভোট।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউপিতে বিএনপির জাহাঙ্গীর আলম ৩ হাজার ২০১ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ৪৪১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের আব্দুল্লাহ আল মামুন (নৌকা) ৪ হাজার ২৪০ ভোট, আ.লীগের বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা (আনারস) ৩ হাজার ২৭১ ভোট এবং স্বতন্ত্র আমিরুল ইসলাম (ঘোড়া) ২ হাজার ২৪৫ ভোট পেয়েছেন।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুর আগে সহড়াবাড়িয়া কেন্দ্রে আ.লীগ ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন আহত হন। কেন্দ্র দখলের চেষ্টার ঘটনায় ষোলটাকা কেন্দ্রে দুই রাউন্ড ফাকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। বিকেলে বামন্দী ইউপির তেরাইল দুটি কেন্দ্র  ও মহাম্মদপুর কেন্দ্রে জালভোট দেয়ার চেষ্টার দায়ে ১০ জনকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে গাংনীর ইতিহাসে একটি নজীরবিহীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মতামত প্রকাশ করেছেন প্রার্থী, ভোটার ও ভোট সংশ্লিষ্ট অনেকেই।