মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর হা হা করে হেসে ওঠেন সাকা

স্টাফ রিপোর্টার: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় পড়ার সময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় বসে নিজের স্বভাবসুলভ চিরচেনা ভঙ্গিতেই ছিলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। পুরোটা সময় ট্রাইব্যুনালের বিচার ব্যবস্থাসহ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে একের পর এক মন্তব্য করে যান। রায় পড়ার সময় তিন বিচারপতিকেই বাক্যবাণে আক্রমণ করেন বারবার। তবে রায়ের শেষ দিকে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণার পর হা হা করে হেসে ওঠেন সাকা। এ সময় অনেকটা ক্রুদ্ধভাব দেখা যায় তার মধ্যে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর দাঁড়িয়ে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ। এ রায় আইন মন্ত্রণালয় লিখেছে। কাঠগড়া থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পর নামাজে দাঁড়ান বিএনপির এই নেতা। ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত সাকার পরিবারের সদস্যরাও সাকার সাথে সুর মিলিয়ে বিভিন্ন তির্যক মন্তব্য করেন। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায় উপলক্ষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে তাকে হাজতখানা থেকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তার পরনে ছিলো সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা। এর পরপরই রায় পড়া শুরু হয়। প্রথমে বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায় পড়েন। এরপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। সবশেষ রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। রায় পড়াকালীন কখনও জোরে, কখনও আস্তে সারাক্ষণই কথা বলেন সাকা। পুরোটা সময় পায়ের ওপর পা তুলে বসে ছিলেন তিনি। পায়ে ছিলো চকলেট রঙের জুতা। এ সময় স্ত্রী, দু ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, ছেলের বউ, মেয়ের জামাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রায় পড়ার শুরুর দিকে বিচারপতি ‘স্বাধীনতার দলিলপত্রে’র কথা উল্লেখ করলে সাকা ‘সহিহ হাদিস’ বলে ব্যঙ্গ করেন। আনোয়ারুল হকের রায় পড়াকালীন সাকা বলেন, ‘সব বেলজিয়াম আর দিল্লি থেকে লিখে পাঠানো হয়েছে। নিজের লেখা হলে নিজের মতো করে পড়া যায়। আরেকজনের লেখা তো ঠিক করে পড়তেও পারে না। এবার বুঝো আমাদের কী জাজ।’ রায়ের শুরুতে বিচারপতি সাকা পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বললে সাকা দাঁড়িয়ে বলেন, ভুল ভুল। আমি ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। রায়ের শেষের দিকে সাকাকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বলা হলে তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘পাঁচ এখনই ছয় হয়ে গেছে। সোনা মিয়ার সোনাটা লাল হইয়া গেছে মিয়াটা ঠিক আছে। দাও ফাঁসি দাও’। এক পর্যায়ে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এগুলো অনলাইনে চলে আসছে। এগুলো পড়ার তো দরকার নাই। গত দুদিন ধরে রায় অলরেডি অনলাইনে। যে অংশটা প্রকাশিত হয় নাই তা শেষ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন’।
এক পর্যায়ে এজলাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে সাকা বলেন, ‘তুমি যে পত্রিকায় কাজ কর, তা বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনায় চলে। তোমার সম্পাদককে বইলো আমি তাকে স্মরণ করেছি। এ সময় তিনি ডেইলি স্টারকে দিল্লি­ স্টার বলেও মন্তব্য করেন।’ বিচারপতি আনোয়ারুল হকের রায়ের অংশ পড়া শেষ হলে সাকা বলেন, ‘শেষ করেন, শেষ করেন। ইলেকশনের আগেই সব শেষ করতে হবে। ইকেলকশনের আগেই রায় কার্যকর করতে হবে।’ এ সময় সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ইলেকশন পর্যন্ত সময়। একটাতে ফাঁসি দিলেই তো ফাঁসি’। সাকা আবার বলেন, আমাকে নির্বাচন করতে না দেয়ার জন্য বেচারারা এত কষ্ট করছে। আমি ’৯৬ সালে শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলাম, তখন আমি ছিলাম দেশপ্রেমিক। পরে আবার বিএনপিতে যোগ দেয়ায় কবিরা গোনাহ করে ফেলেছি। এ সময় তিনি বিচারপতি জাহাঙ্গীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সবগুলোই দেখি এক। ঠিক করে ইংরেজিও পড়তে পারে না। আইন করি আমরা। এসব কী জাজ নিয়োগ দিলাম।’
জোহরের আজান দিলে কিছু সময়ের জন্য রায় পড়া স্থগিত রাখেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। এ সময় সাকা বলেন, ‘নাস্তিক আবার আজান শুনে। সে খাইরুল হকের (সাবেক প্রধান বিচারপতি) লগে মিল্লা সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস উঠাই দিছে। এখন আবার আজানের বিরতি দেয়।’
রায় ঘোষণার শেষ দিকে সাকা বলেন, ‘কসাই কাদেরের দোষ চাপাইয়া মোল্লা সাহেবকে (জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা) ফাঁসি দেয়া হল। আর আমারে দেবে ফজলুল কাদেরের ছেলে হিসেবে, পৈতৃক সূত্রে।’ তিনি বলেন, ‘মাওলানা সাঈদীকে তারা ফাঁসি দিছে। আমি তো গুনাহগার। আমার ফাঁসিই প্রাপ্য।’ মৃত্যুদণ্ডে রায় ঘোষণার পর প্রথমে হা হা করে হেসে ওঠেন সাকা। এরপর তাকে অনেকটা ক্রদ্ধভাবে বিচারপতিদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। সাকার স্ত্রী পাশ থেকে ‘তুমি কিছু বল’ কয়েকবার বললে তিনি দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলেন, ‘এই রায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়েছে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আমি আইন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিলাম’ এরপর সাকাকে কাঠগড়া থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।