মুজিবনগরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনাসভায় ওবায়দুল কাদের : দলের ভেতরে শুধু কাউয়া নয় ফার্মের মুরগিও ঢুকেছে

 

মুজিবনগর প্রতিনিধি: দলে অনুপ্রবেশকারীদের এবার ফার্মের মুরগি বলে আখ্যায়িত করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুর মুজিবনগর আম্রকাননে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতার্কীদের উদ্দেশে বলেন, কলহ করবেন না। সিলেটে বলছিলাম কাউয়া। এখানে কাউয়া বলবো না। কিন্তু এখানেও মনে হয় ফার্মের মুরগি ঢুকে গেছে। দেশি মুরগি দরকার, ফার্মের মুরগির দরকার নাই। এটা স্বাস্থ্যকর নয়। দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে, ফার্মের মুরগি ঢুকতেছে। এটা খেয়াল রাখেন। সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ আলোচনাসভার আয়োজন করে। আলোচনাসভার মঞ্চে বসা নেতৃবৃন্দকে দেখিয়ে তিনি বলেন, পুরো মঞ্চে নেতা। নেতার নেতা। বিলবোর্ডে দেখি পাতি নেতা, ছোট নেতা, বড় নেতা, তিনি নেতা, উনি নেতা, নেতার আর অভাব নেই। বাইরে দেখি এক চেহারা বিলবোর্ডে দেখি আরেক চেহারা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নাম বেচে অপকর্ম করলে সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের নামে অপকর্ম চলবে না। গত রোববার অনুষ্ঠিত বিভিন্ন এলাকার ইউপি নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয় অবধারিত। তাই দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি হচ্ছে- বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। তাদের কোনো যৌক্তিক ইস্যু নেই। একটার পর একটা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। তাদের ইস্যু তৈরির ফ্যাক্টরি আছে। আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিএনপি নেতারা বাসায় বসে হিন্দি সিনেমা দেখেন। তারা নির্বাচনে না দিয়ে ভুল করেছে। তাই জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে তাই বিএনপির গাত্রদাহ অভিযোগ করে তিনি বলেন, তিস্তা-গঙ্গা বিএনপি নেতাদের অন্তরে নেই। গঙ্গা যারা চুক্তি করেছে তারাই তিস্তা চুক্তি করবে। এটা তাদের চেতনা। এটা তাদের আদর্শ। এটা তাদের অন্তরের কামনা। বাংলাদেশ, মুক্তযুদ্ধ, গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাকে সরকার প্রধান করে সেদিন সরকার গঠিত হয়েছিলো। মুজিবনগর সরকারের অধীনে যারা বেতন ভোগ করতো, সেক্টর কামান্ডার ছিলো তাদের দল ১৭ এপ্রিল পালন করে না। ১৭ এপ্রিল যারা পালন করে না তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে কি-না সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন ওবায়দুল কাদের। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগে আপ্লুত ছিলেন ওবায়দুল কাদের। দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কঠোর বক্তব্য দেয়ায় উপস্থিত জনতা মুহুর্মুর্হু করতালি দিয়ে তার প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হামলার মুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহম্মেদ, ক্যাপ্টেন এম মুনছুর আলী ও কামরুজ্জামান সাহেব এখানে শপথ নিয়েছিলেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে শুরু করেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধ। কিন্তু তারা চলে গেলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আজও অন্য এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। আগামী ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচন শেখ  হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে হুঁশিয়ারি করে মোহম্মদ নাসিম আরো বলেন- অন্য কোনোভাবে নির্বাচন হওয়ায় কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ যেভাবে রায় দেবে আমরা তাই মেনে নেবো। আমরা কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে হেরেছি। কিন্তু তা মেনে নিয়েছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিএনপির প্রতিপ্রত্ন তুলে বলেন, বিএনপি কোন মুক্তিযোদ্ধার দল? জিয়াউর রহমান কখনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। বক্তব্যে বিএনপির কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে ২০ হাজার টাকা উৎসব ভাতা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণে শেখ হাসিনার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই মুজিবনগরকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে সম্প্রতি ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অপরদিকে নির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও লোকবল নিয়োগের ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, রাজশাহী সিটি সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর, ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল। মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু ও বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা সভাপতি-সম্পাদকবৃন্দসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সকাল সাড়ে দশটায় ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ নাসিমসহ নেতৃবৃন্দ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পরে আম্রকাননে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও গালর্স গাইড অভিবাদন গ্রহণ করেন অতিথিবৃন্দ। অভিবাদন শেষে আনসার-ভিডিপি একটি দল ‘হে তারণ্য রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামে গীতিমাল্য উপস্থাপন করে। পৌনে এগারোটায় শেখ হাসিনা মঞ্চে শুরু হয় আলোচনাসভা। অনুষ্ঠান ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে পুলিশ। এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে স্মৃতিসৌধে পতাকা উত্তোলন করে জেলা প্রশাসন। সকাল থেকে জেলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আমবাগানে উপস্থিত হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।