মুজিবনগরে এক শিশুকে নিজেদের সন্তান দাবি করলেন দুই পিতা-মাতা

 

 

ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কারসাজি কি-না খতিয়ে দেখছে পুলিশ : প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা

 

মুজিবনগর প্রতিনিধি: মেহেরপুর মুজিবনগরে এক শিশু নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। যমজ সন্তান প্রসবের পর একটি হারিয়ে যাওয়া দাবি করে নিঃসন্তান দম্পত্তির দত্তক নেয়া শিশুকে নিজের দাবি করেছেন পুরুন্দরপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও তার স্ত্রী। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার পুলিশ ওই শিশুকে উদ্ধার করে তদন্তের জন্য মাঠে নেমেছে।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন জানান, গত ২৬ মার্চ মেহেরপুর শহরের দারুস সালাম ক্লিনিকে পুরন্দরপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী কাঞ্চন মালার সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপারেশনের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের একটি শিশুপুত্র হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় তাদের যমজ সন্তান ছিলো বলে দুটি রিপোর্টে উল্লেখ আছে। অপারেশনের পর তারা একটি পুত্রসন্তান কাছে পান। আরেকটি কোথায় গেল? এ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় হইচই। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট ভুল হয়ে থাকতে পারে ভেবে প্রাথমিকভাবে একটি সন্তানই মেনে নেয় ওই দম্পতি।

এদিকে আনন্দবাস গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি জসিম উদ্দীন ও সেলিনা খাতুনের  বাড়িতে একই বয়সী শিশু দেখে নিজেদের সন্তান বলে সন্দেহ করে জয়নাল দম্পতি। ওই শিশুপুত্র নিজের দাবি করে থানায় অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল রোববার মুজিবনগর থানা পুলিশের একটি দল আনন্দবাস গ্রাম থেকে ওই শিশুসহ জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রীকে আটক করে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদ শেষে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে মেহেরপুর সদর থানায় পাঠানো হয়।

জসিম উদ্দীন ও সেলিনা খাতুন শিশুপুত্রকে এক নারীর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকায় নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালনের জন্য গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেন। এর স্বপক্ষে একটি এফিডেভিট দেখান তিনি।

মেহেরপুরের অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তাফার মাধ্যমে সম্পন্ন করা এফিডেভিটে দেখা যায় ওই সন্তানের মা গাজিপুরের শ্রিপুর উপজেলার হালুকাদ গ্রামের মৃত আব্দুর রবের স্ত্রী। স্বামীর অবর্তমানে সংসারের অভাবের দরুন সন্তান লালন-পালন করতে না পারায় ৭০ হাজার টাকায় তিনি পুত্রসন্তানকে জসিম উদ্দীন দম্পতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। তার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া ও মঙ্গলার্থে তিনি স্বেচ্ছায় এ কাজটি করেছেন বলে এভিডেভিটে উল্লেখ করেন। জমিস উদ্দীন ও তার স্ত্রী রাবেয়ার বিশেষ পরিচিত বলেও দাবি করা হয়।

বিকেলে মুজিবনগর থানা থেকে ২ দম্পতিসহ দুই শিশুকে সদর থানায় নেয়া হয়। শিশুটি প্রকৃতপক্ষে জয়নাল আবেদীন দম্পতির কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ায় রাবেয়াকে হাজির করানোর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে শিশুটির প্রকৃত পিতা-মাতা দাবিকারীদের কাছেই হস্তান্তর করে পুলিশ। এ বিষয়ে সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

সদর থানার ওসি ইকবাল বাহার জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। শিশু প্রদানকারী রাবেয়াকে থানায় হাজির করতে বলা হয়েছে জসিম উদ্দীন পরিবারকে। প্রয়োজনে দুই শিশু ও প্রকৃত পিতামাতা দাবিকারীদের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হতে পারে। এছাড়াও ক্লিনিক থেকে বাচ্চা চুরি কিংবা ক্লিনিকে কোনো লুকোচুরি হয়েছে কি-না তা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।