মিয়ানমার সেনাদের হুমকিতে আতঙ্কে শূন্যরেখার রোহিঙ্গারা

২৭ মার্চ থেকে বিজিবি ও বিজিপি সীমান্তে যৌথ টহল দেবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে থাকা অসহায় রোহিঙ্গাদের সরে যেতে বারবার হুমকি দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষীরা। কিন্তু ওপারে সশস্ত্র বিজিপি ও সেনা এবং এপারে সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকায় এরা না পারছে নিজ দেশে ফিরতে না পারছে বাংলাদেশে ঢুকতে। ফলে তারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত শনিবার সকালে তুমব্রু শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এ কথা জানিয়েছে।

এদিকে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে মিয়ানমার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমার সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছিলো। এখন সীমান্ত থেকে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে তারা। আগামী ২৭ মার্চ থেকে পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সীমান্তে যৌথ টহল দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনায় নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে শুক্রবার দু’দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের পর নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে মিয়ানমার সেনাদের সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি একটু শান্ত হবে রোহিঙ্গা নেতা দিলো মোহাম্মদ জানান। তিনি বলেন, মিয়ানমার তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নেয়নি। শুধু আন্তর্জাতিক মহলের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য তারা নো ম্যানস ল্যান্ডে আসা-যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে। কিন্তু রাতের বেলায় সেনা, বিজিপি ও রাখাইন যুবকেরা শূন্যরেখায় এসে তাদের বস্তির ঝুপড়িতে ইট, পাটকেল, পাথর, গাছের গুড়ি ও খালি মদের বোতল নিক্ষেপ করছে। এসব কিছু ঝুপড়ির পলিথিন ছিড়ে ঘুমন্ত ছেলে-মেয়ের ওপর পড়ছে। ফলে বস্তিজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যেকোনো নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দাবী জানান ওই রোহিঙ্গা নেতা।

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের কারণে তুমব্রু সীমান্তের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপনের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, বস্তির রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য মিয়ানমার সেনারা প্রতি রাতেই সীমান্ত এলাকায় এসে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে থাকে। এমনকি তারা সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড অতিক্রম করার চেষ্টা করলে এপারে গ্রামগুলোতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তিনি নো ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের হয় স্বদেশে ফেরত, নয়তো যে কোনো নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান।

২৭ মার্চ থেকে বিজিবি ও বিজিপি সীমান্তে যৌথ টহল দেবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী ২৭ মার্চ থেকে পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী বিজিবি ও বিজিপি সীমান্তে যৌথ টহল দেবে বলে জানিয়েছেন। মিয়ানমার তুমব্রু সীমান্ত থেকে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমার সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছিলো। এখন সীমান্ত থেকে ভারী অস্ত্র সরিয়ে নিয়েছে তারা। এখন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শিগগিরই নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে সেনা সমাবেশ করেছে। এটা তারা পারে না। সীমান্তে গুলি বর্ষণও তারা করতে পারে না। তাদেরকে উসকানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। শুক্রবার যশোরের শার্শা উপজেলার শালকোনায় কম্পোজিট বিওপি খেলার মাঠও অডিটোরিয়াম উদ্বোধন ও ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমার যেসব অতিরিক্ত সেনা সদস্য সীমান্তে মোতায়েন করেছিলো গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে অপসারণ করে তাদের নির্ধারিত ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সীমান্তের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।