মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচিতে বক্তারা

রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাস করার সুযোগ দিতে হবে

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের দাবিতে বিএনপি সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি আহ্বান করে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি কেদারগঞ্জে মহিলা কলেজ রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। মেহেরপুরে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় মানববন্ধনে পুলিশ বাধা দেয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কেদারগঞ্জস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচিত অংশগ্রহণ করেন। এই নির্মম মানবতাহীন কাজের জন্য মায়ানমার ক্ষমতাসীন দলেন নেত্রী অং সান সুচির তীব্রনিন্দা করে এবং বাংলদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেয়ায় শেখ হাসিনার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, সারা মুসলিম বিশ্ব যখন সুচির এই মানবতাহীন কাজের জন্য ধিক্কার জানাচ্ছে সে সব দেশের সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে তখন বিএনপির কর্মসূচি এই মানববন্ধনে অনেক জায়গায় পুলিশের বাধার সৃষ্টি হয়েছে এটা চরম লজ্জার। তিনি ধিক্কার জানান, এই কর্মকাণ্ডের। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার ক্ষমতাসীন দেলের নেত্রী যে বলেছে তার সরকার সংঘাত কবলিত রাখাইন রাজ্যের সব নাগরিককে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা মুখে নয় তা কাজে প্রমাণ করতে হবে। অবিলম্বে রাখাইন রাজ্যের সব রোহিঙ্গাদের নিরাপদে তাদের নিজ নিজ জায়গায় বসবাস করার অধিকার ও সুযোগ দিতে হবে। আর যতোদিন পর্যন্ত তা না হয় ততোদিন এই নীড়হারা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকে এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে এর সুন্দর সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, হাজি রবিউল ইসলাম বাবলু, থানা বিএনপি সভাপতি অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক হাজি খালেক, সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেদ রাজীব খান, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নূরনীব ছামদানী, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাহাবুল হক, থানা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুস ছালাম বিপ্লব, পৌর বিএনপির সহসভাপতি ইন্তাজুল ইসলাম, ছাত্রদলের সোহেল, সোহাগ, শাহিন, আরিফুলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, মিয়ানমারে নির্বিচারে রোহিঙ্গগা মুসলিমদের নৃশংসভাবে হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে জীবননগরের মুসল্লীরা গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সামবেশ করেছে। প্রতিবাদ সমাবেশ হতে অবিলম্বে এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে জাতিগত মুসলিম নিধনের মদদদাতা শান্তিতে নোবল জয়ী বার্মার নেত্রী অং সান সুচির নোবেল প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জীবননগর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও থানা মসজিদের খতিব মাও. আব্দুল খালেক, হাসাদাহ ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের খতিব মাও. মো. আক্তারুজ্জামান ও বাজার জামে মসজিদের খতিব মাও. আবুজর গিফারী।

এর পূর্বে বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, হাইস্কুলপাড়া জামে মসজিদ, পান বাজার জামে মসজিদ ও বাজার মসজিদ থেকে বাদ জুমা মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে একত্রিত হন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মিয়ানমারসহ সারাবিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা করাসহ তাদের জীবনে শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ মাও. আক্তারুজ্জামান।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা, নারী-শিশুদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও নিপীড়ন বন্ধ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার দিয়ে সম্মানের সাথে মিয়ারমারে ফিরিয়ে নেয়া ও নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জেলা বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুর রহমান, ইলিয়াস হোসেন, আনছার-উল হক, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক জহিরুল ইসলাম বড়বাবু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওবাইদুল্লাহ সেন্টু, জেলা কৃষকদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সদর উপজলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মোল্লা, জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক আব্দুর রহিম, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরউদ্দিন বিশ্বাস, পৌর বিএনপির সহসভাপতি আলহাজ ফজলু খান, হাবিব ইকবাল, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কাজি মিজান মেনন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল কবির, জেলা তাঁতিদলের সভাপতি আরজুল্লাহ মাস্টার বাবলু, জেলা স্চ্চোসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ, যুবদল নেতা জাহিদুল হক জাহিদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাজিব আহমেদ খান প্রমুখ।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের কেপি বসু সড়কে দলীয় নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য জড়ো হতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে বিএনপি তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বলে নিশ্চিত করেন দলের দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন।

জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, শহরের বিভিন্ন পাড়া থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকলে পুলিশ রাস্তা থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেয়। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান দলীয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন না করতে দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কুটনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থ। অন্যদিকে বিএনপি রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গেলে জনবিচ্ছিন্ন সরকার ভয়ে তাও পালন করতে দেয়নি। তিনি এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এভাবে মানুষকে হত্যা করার কারো অধিকার নেই।

বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি বাধা দেয়ার বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, কর্মসূচি পালনে পুলিশ কারো বাধা দেয়নি। বরং মাঠে তাদের পাওয়ায় যায়নি। এদিকে কালীগঞ্জ বিএনপির পক্ষ থেকে সাবেক প্যানেল মেয়র বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক হামিদুল ইসলাম হামিদ অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে প্রশসন তাদের অনুমতি দেয়নি। জেলার অন্যান্য উপজেলায় বিএনপির কর্মসূচি পালনে বাধা প্রদানের অভিযোগ করেন জেলা বিএনপি।