মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও রাশিয়ার জোরালো অবস্থান

সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক সম্পন্ন

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও রাশিয়া জোরালো অবস্থান নেয়ার কারণে সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব গ্রহণ ছাড়াই শেষ হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্ক। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর ওই দুটি দেশ গুরুত্বারোপ করেছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সেনা অভিযান বন্ধ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিয়ানে জড়িত মিয়ানমারের সেনাদের বিচারের দাবি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যে সেভ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। বৈঠকে বেশিরভাগ দেশই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করেছে। তবে বরাবরের মতো সব অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হলে নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। এখনো প্রতিদিন তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের এ সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীন এবং চার অস্থায়ী সদস্য সুইডেন, মিশর, সেনেগাল ও কাজাখস্তানের যৌথ আহ্বানে বৃহস্পতিবার শুরু হয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। এটাই আট বছরে মিয়ানমার নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম উন্মুক্ত বৈঠক। বৈঠকে উন্মুক্ত আলোচনা শুরু করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষে জোরালোভাবে অবস্থান নেয়ার কারণেই কোনো প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ। এমনকি বেইজিং ও মস্কোর কঠোর বিরোধিতায় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চালানো সেনাবাহিনীর অমানবিক নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাবও আনতে পারেনি পরিষদ। মিয়ানমার এথনিক ক্লিনজিং বা গণহত্যা সংগঠিত করছে না, তা জোর দিয়ে বলেছে চীন ও রাশিয়া। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি সহিংসতার জন্য এই দেশ দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন। এ দেশ দুটির বিরোধিতায় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেয়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেভ জোন প্রতিষ্ঠার যে দাবি তোলেন, তা অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।

রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে যেসব দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিলো তাদের অনেকেই বৈঠকে নিশ্চুপ ছিলেন। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিব দুই সপ্তা আগে জোরালোভাবে সেনাবাহিনীর অভিযানকে এথনিক ক্লিনজিং বললেও বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের বক্তৃতায় ওই শব্দটিও ব্যবহার করেননি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডা শুরু থেকে সোচ্চার থাকলেও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেয়া দেশটির প্রতিনিধি এ বিষয়ে একদম নিশ্চুপ ছিলেন। ওই বৈঠকে শুধুমাত্র মিয়ানমারকে দ্রুত সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা বিবরণ তুলে ধরেন।