মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানিয়েছি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিবে এটা আমরা চাই। কারণ ভোটের অধিকার মৌলিক অধিকার। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মারকুইস হোটেল হলরুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সম্মানে দেয়া এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বলেন, নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যা জানতে হবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার এমপিদেরও বলেছি, আপনারা দেখেন, শেখেন। কীভাবে ভোটারের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা যায়। ওই বড় বড় গাড়ি-বাড়ি হলেই ভোটাররা ভোট দেবে না। ভোটারের সমস্যা জানতে হবে। সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তাদেরকে আপনজন ভাবতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজনে এক বেলা খেয়েও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে। তবে এই শরণার্থীদের যে ফিরিয়ে নিতে হবে, সে কথা মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমারকে আমরা বলেছি, আপনাদের নাগরিক, তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার চলবে না। তিনি বলেন, ‘তাদের (মিয়ানমার) ওপর যেন চাপ সৃষ্টি হয়। তাদের নাগরিক তারা ফেরত নিয়ে যাবে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। সেটাই আমরা চাই।’ তিনি বলেন, রাখাইনের সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে ঐকমত্যের অভাবে বিশ্বে মুসলিমরা মার খাচ্ছে।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি মঙ্গলবার বলেছেন, নব্বইয়ের দশকে করা প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় ‘যাচাইয়ের মাধ্যমে’ বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে তার দেশ প্রস্তুত। কিন্তু এই শরণার্থীদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে স্বীকার করে না নেয়ায় এবং তাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়টি ভাষণে এড়িয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটুক, তা বাংলাদেশ চায় না। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশী কোনো দেশে কাউকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়া হবে না- সরকার তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজকে জাতিসংঘে যাদের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, প্রত্যেকেই কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। মঙ্গলবারই জাতিসংঘে ওআইসির এক বৈঠকে আমি প্রশ্ন রেখেছি, আজকে মুসলমানরা কেন রিফিউজি হয়ে ঘুরে বেড়ায়? আপনারা সকলে কেন এক হন না? কেন সকলে ঐক্যবদ্ধ হন না? শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে দেশের বিভিন্ন খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি দেশের সাফল্যের কথা ব্যাপকহারে প্রচারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ আশাপ্রদ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং দেশটি এখন বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে রয়েছে। এই বিষয়টি বিদেশে তুলে ধরা প্রয়োজন।’ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ দলীয় নেতাকর্মী ও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশ নেন। সজিব ওয়াজেদ জয় তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের অভাব নেই, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, সবাই শান্তিতে আছেন। এখন আমাদের সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোকে শেখ হাসিনার ৬ দফা প্রস্তাব: রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মুসলিম দেশগুলোকে ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ওআইসি কন্ট্রাক্ট গ্রুপের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারে দুর্দশাগ্রস্ত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-র প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোরামের যেকোনো উদ্যোগে যোগ দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। শেখ হাসিনার ৬ দফা প্রস্তাবগুলো হলো- রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেয়া হবে। বলপ্রয়োগের ফলে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রোপাগাণ্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে। অন্যান্যের মধ্যে ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথাইমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।