মির্জা ফখরুল গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়া বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও তার গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। গত সোমবার দুপুরে কার্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে পুলিশের লাগানো তালা গতকালও খোলা হয়নি। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে টানা ২৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বের হওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। ফখরুলের মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার রংপুর বিভাগের আট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।

জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসায় স্থাপিত আদালতে খালেদা জিয়ার আজ হাজিরা দেয়ার দিন ধার্য রয়েছে। অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন আজ আদালতে যাচ্ছেন কি-না, কিংবা না গেলে কী হয়- তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখি জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। তাই দেশের প্রায় সবার আজ দৃষ্টি থাকবে আদালতের দিকে। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খালেদা জিয়া আজ আদালতে যাচ্ছেন কি-না, জানতে চাইলে তার আইনজীবী বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল বলেন, তিনি তো অবরুদ্ধ। কীভাবে যাবেন? আমরা এ বিষয়টি এবং তার নিরাপত্তার অভাবের কথা আদালতে তুলে ধরবো।

ফখরুল যেভাবে গ্রেফতার: গ্রেফতারের আগে মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরে বিএফইউজে (একাংশ), ডিইউজে (একাংশ) এবং প্রেসক্লাবের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় নেতা বেষ্টিত অবস্থায় দোতলা থেকে নিচে নেমে প্রাইভেট কারে ওঠেন। তাকে বহনকারী গাড়ি প্রেসক্লাবের গেট দিয়ে বের হলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে চারটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন। আজ বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীদের এক সমাবেশে যোগ দিতে গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যান ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে চার দফা দাবিতে প্রেসক্লাব আঙিনায় পূর্বনির্ধারিত এক সমাবেশ চলছিলো। ফখরুল ইসলাম আলমগীর পেশাজীবীদের ব্যানারে বহিরাগতদের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে প্রেসক্লাবে সমবেত সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলে। সমাবেশ শেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের কক্ষে আশ্রয় নেন।

এদিকে গুলশানের নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল সকাল থেকে দু’বার বমি করেছেন তিনি। দিনভর ছিলো বমি বমি ভাব। চোখ ও নাক দিয়ে ঝরছে পানি। মাথা ব্যথা ও  জ্বালা-পোড়া করছে শরীর। শ্বাসকষ্ট ও ঘন ঘন কাশি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া। গত সোমবার বিকেলে তার গাড়ি লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া পিপার স্প্রেতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।