মিথ্যা অভিযোগে ময়নাতদন্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী : আলমডাঙ্গার বেলগাছির কৃষকের লাশ তুলে দেয়া হলো বিজিবি সদস্য রাজিবের বাড়িতে

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন কৃষক আজগর আলীর বিষপানে আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বেলগাছি গ্রামে তুলকালাম কাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর গতকাল ১৯ আগস্ট লাশ বেলগাছি গ্রামে পৌঁছুলে বেলগাছির বোর্ডপাড়ার উত্তেজিত লোকজন লাশ বিজিবি সদস্য রাজিবের বাড়ি রেখে আসে। বেলগাছি গ্রামের পুরাতন মসজিদপাড়ার বিজিবি সদস্য রাজিব মানসিক ভারসাম্যহীন আজগর আলীকে জোর করে বিষপান করিয়ে হত্যা করেছে অভিযোগ তুলে তারা লাশ বিজিবি সদস্যের বাড়িতে রেখে আসে। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের বোর্ডপাড়ার রবজেল আলীর ছেলে আজগর আলী (৪০) ২ সন্তানের জনক। বেশ কয়েক বছর তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভূগছিলেন। প্রায় বছর খানিক পূর্বে তিনি আলমডাঙ্গা রেললাইনে ট্রেনের নীচে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে আশপাশের মানুষ টের পেলে অল্পের জন্য সে সময় তিনি বেঁচে যান। গ্রামসূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার বিকেলে তিনি সকলের অগোচরে বিষপান করেন। গুরুত্বর অবস্থায় তাকে আলমডাঙ্গায় ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়ার সময় শহরের ফাঁয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের সামনে তার মৃত্যু হয়। গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামে পৌঁছুলে শুরু হয় তুলকালাম কাণ্ডের। বেলগাছি গ্রামের বোর্ডপাড়ার উত্তেজিত লোকজন লাশ একই গ্রামের পুরাতন মসজিদপাড়ার গোলাপ মণ্ডলের ছেলে বিজিবি সদস্য রাজিবের বাড়িতে রেখে আসে। তারা দাবি তোলেন রাজিব মানসিক ভারসাম্যহীন আজগর আলীকে জোর করে বিষ পান করিয়ে মেরেছে। এমন দাবি মৃত আজগর আলীর ১২ বছরের ছেলে রোহান ও আজগর আলীর স্ত্রীও তোলেন। কিন্তু কেনো রাজিব তাকে বিষপান করিয়ে হত্যা করলো এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর তাদের নিকট থেকে মেলেনি। তার মৃত্যুর ২২/২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কেনো এখন রাজিবের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তোলা হচ্ছে? তারও কেউ জবাব দেয়নি। গতকাল সন্ধ্যায় বোর্ডপাড়ায় বেশ কিছু যুবক জড়ো হয়। তারা উত্তেজনা ছড়ায় রাজিবের বিচারের দাবিতে। শাদা কাগজে ওই পাড়ার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করে। যদিও কি উদ্দেশে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে তার কিছুই উল্লেখ ছিলো না গণস্বাক্ষরের শাদা খাতায়। এরপর পুরাতন মসজিদ পাড়ার  অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য রাজিবের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, উঠোনে খাটিয়ায় লাশ পড়ে আছে। রাজিব বাড়িতে অনুপস্থিত। তার মা ও স্ত্রী জানান ছুটি শেষে  তিনি আজ সকালে কর্মস্থল ঢাকা গাজীপুর চলে গেছেন। রাজিবের পিতাকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে কোনো পুরুষ লোকই নেই। আশপাশের লোকজন ভিড় করে আছে। রাজিবের মা জানান, প্রতিহিংসা করে তার ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন এসব ষড়যন্ত্র করছে কীটনাশক বিক্রেতা মন্টু। মন্টুর সাথে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে, সেই কারণে রাজিবকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।

মৃত আজগর আলীর বাড়ি বোর্ডপাড়া থেকে বিজিবি সদস্য রাজিবের বাড়ি মসজিদপাড়া প্রায় ১ কিলোমিটারের ব্যবধান। এ দুই পাড়ার মাঝে মণ্ডলপাড়া নামের আরেক পাড়া রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় বোর্ডপাড়া থেকে রাজিবের বাড়ি পুরাতন মসজিদপাড়ায় যাওয়ার সময় মণ্ডলপাড়ার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। মণ্ডলপাড়ার তাইজাল মল্লিকের ছেলে বিদ্যূত জানান, আত্মহত্যাকারী আজগর আলী গত পরশু দিন ক্ষেতে দেয়ার জন্য বিষ কিনবে এ কথা বলে একই গ্রামের সালামের নিকট থেকে ২শ টাকা ধার করে। পরে বিকেলের দিকে সে পুরাতন মসজিদপাড়ার তুফান বিশ্বাসের ছেলে মন্টুর দোকান থেকে কীটনাশক কেনে। তারপর তাইজাল সর্দ্দারের বাড়ি গিয়ে এক বদনা পানি নিয়ে পায়খানা ফেরার নাম করে ল্যাট্রিনে ঢুকে। ল্যাট্রিনে বসে বিষপান করে। কিছুক্ষণের মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরে আলমডাঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।

তবে কেনো বিজিবি সদস্য রাজিবের বিরুদ্ধে মানসিক ভারসাম্যহীন আজগর আলীকে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগ তোলা হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে গ্রামের বিভিন্ন পাড়ার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়।  কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষপানে আজগর আলীর মৃত্যু হলে গ্রামের মানুষ চেয়েছিলেন ঝামেলা ছাড়া গ্রামে দাফন করবেন। থানা পুলিশের ঝামেলায় যাবেন না। কিন্তু বাঁধ সাধেন বিজিবি সদস্য রাজিব। তিনি তাদের পারিবারিক শত্রুতাকে পুঁজি করে মন্টু কেনো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নিকট কীটনাশক বিক্রি করলো নতুন করে এ প্রশ্ন তোলেন। তিনি মন্টুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানিয়ে দেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় আত্মহত্যাকারী আজগর আলীর পাড়ার মানুষ বিজিবি সদস্য রাজিবের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। তাদের দাবি রাজিবের কারণেই আজগর আলীর দাফন করা গেলো না। এ সকল ক্ষুদ্ধ লোকজনের সাথে কীটনাশক বিক্রেতা মন্টুরও যোগসাজস থাকতে পারে। এছাড়া ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে রাজিব সাধারণ গ্রামবাসীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, দেমাগ দেখায় এমন অভিযোগও রয়েছে। এসব নিয়ে যাদের সাথে মনোমালিন্য স্বাভাবিকভাবে তারাও গতকাল সন্ধ্যায় রাজিবের বিরুদ্ধ পক্ষের সাথে যোগ দেয়। এদিকে, অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য রাজিবের সাথে মোবাইলফোনে কথা হয়, তিনি বলেন, সামাজিকভাবে তাদের পরিবারের মানসন্মান ক্ষুণ্ণ করতে কয়েকজন লোক ষড়যন্ত্র করেছে। ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তিনি মানহানির মামলা করবেন।  রাতেই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। লাশ আজগর আলীর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া  হয়। রাতেই দাফনের প্রস্তুতি চলছিলো।