মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করুন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে দেশের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সহ্যেরও সীমা আছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াতের হাত ধরে অবরোধের নামে মানুষ খুন করা হবে, আর আমরা তা নীরবে সহ্য করবো এটা হবে না। দেশের জনগণের জানমাল রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা বিধানে যা যা করণীয় সরকার তা করবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো সময় আছে মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করুন, নতুবা জনগণ ক্ষেপে গেলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। মানুষের ভাগ্য ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর বরদাশত করা হবে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে কারা বোমা মারছে, বোমা তৈরি করছে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন। তাদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন আর রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের নেত্রী। আমরা আর তাকে জনগণের শান্তি বিনষ্ট করতে দেবো না। সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবাজদের আন্দোলনে দেশের জনগণ সাড়া দেবে না। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, জঙ্গিবাদী তত্পরতা চালিয়ে দেশের এ অগ্রযাত্রাকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের আহূত হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে লাখো মানুষের ঢল নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ অবরুদ্ধ করে রাখেনি। উনি ঘর ছেড়ে অফিসে কেন? নিজ অফিসে উনি নিজেকে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। উনি বাড়িতে চলে যাক, কেউ বাধা দেবে না তাকে। নতুন ঘাঁট ও গদি বানিয়ে তা অফিসে নিয়ে তাতে শুয়ে আপনি (খালেদা) কী স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। অবরোধের নামে সাধারণ মানুষের লাশ ফেলে আপনি কি ঘটাতে চান? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। এখন আবার উনার ঘাড়ে কী ভুত চাপলো যে, এক বছর পর আবার পাঁচ জানুয়ারি উনি অবরোধ ডাকলেন। উনার অবরোধের আহ্বান কে মানছে? দেশের জনগণ তো দূরের কথা খালেদার ডাকে তার নিজ দলের নেতাকর্মীরাই সাড়া দেননি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশে বলেন, কী দোষ করেছে দেশের জনগণ। জনগণের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করছেন কেন? আপনি নির্বাচনে আসেননি, এটা আপনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে না আসার ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে, জনগণকে নয়। শেখ হাসিনা আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের জন্য খালেদা জিয়ার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। উনি যতোই চেষ্টা করুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবেন না। পরাজিত শক্তির দোসররা মানুষের আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

বিশ্ব ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ প্রত্যাহার না করায় খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ইজতেমা হয়ে গেলো, হাজার হাজার মুসল্লি এতে অংশ নেয়। বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় জমায়েত এটা। জামায়াত ধর্মের নামে রাজনীতি করে আর উনি (খালেদা জিয়া) ইসলামের ধ্বজা ধরে থাকেন। তাহলে ইজতেমার সময় অবরোধ কেন করেন? সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। ইসলামের প্রতি সামান্য দরদ থাকলে খালেদা জিয়া অবরোধ বহাল রাখতে পারতেন না। তবে উনি অনেক চেষ্টা করেছেন, মুসল্লিদের ঠেকাতে পারেননি। আওয়ামী লীগসহ দেশের জনগণ পাহারা দিয়েছে, যাতে মুসল্লিদের আসা-যাওয়াতে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচনে কেন আসেননি তা অনেকেই জানেন। জামায়াতের কারণেই বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে আসেননি। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত শর্ত পূরণ করতে না পারায় নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে; কিন্তু বিএনপি নেত্রী জামায়াতকে ছাড়া নির্বাচনে আসবেন না। আর খালেদা জিয়া জানতেন নির্বাচনে গেলে তার ভরাডুবি ঘটবে, এ কারণেই উনি নির্বাচনে না গিয়ে নির্বাচন বানচালের নামে শ শ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয় আন্দোলনের নামে তারা মসজিদে আগুন দিয়েছেন, পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়েছেন, অবলা গরুও তাদের নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। আমরা এক বছর সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করেছি। সব দিক থেকে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি নাকি সরকার উত্খাত না করে ঘরে ফিরবেন না! তবে মনে রাখা উচিত- সন্ত্রাস ও জঙ্গি রানীর কথায় জনগণ আসবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। মাত্র এক সপ্তার ব্যবধানে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সর্বোচ্চ দুটি পদে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যদি বৈধই না হতো তাহলে এতোগুলো দেশের ভোট বাংলাদেশ পেতো না। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব বুঝে না, বুঝেন শুধু উনি (খালেদা জিয়া) আর উনার কুলাঙ্গার পুত্র (তারেক জিয়া), যে মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল আর রাজনীতি করবে না বলে। ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন খুলে মানুষ হত্যা, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার- সবই করেছে। মানি লন্ডারিং মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি। যেমন মা তেমনই তার পুত্র! দেশের মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার শুরু করেছে। লন্ডনে বসে দেশের মানুষ হত্যা করছে।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকার সফলতার সাথে এক বছর পার করলো। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এজন্য কৃতজ্ঞ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।