মানুষের এমন দুর্দশা কখনো দেখিনি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ইইউ তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এখনো রোহিঙ্গা মুসলিমরা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় চরম মানবিক সংকটের তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে গতকাল রোববার কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জার্মানি, সুইডেন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদেরকে নিজ বাস-ভূমে ফিরিয়ে নিতে আসন্ন আসেম সম্মেলনে তারা জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন। আজ সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং বা আসেম’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হচ্ছে। অংশীদার দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে একটি রাজনৈতিক সংলাপের ফোরাম হলো আসেম। এই ফোরামের অংশীদার হলো ইউরোপ ও এশিয়ার ৫৩ দেশ।

গতকাল রোববার ও শনিবার পৃথক পৃথকভাবে ঢাকায় এসে পৌঁছান ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয় উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মোঘেরিনি, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে গতকাল সকালে কক্সবাজারের উখিয়ায় যান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন।

ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় তারা নির্যাতনের শিকার কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসন কেন্দ্র আইওএম’র প্রাথমিক চিকিত্সা সেবা কেন্দ্র, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা’ উল্লেখ করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখানে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে দেখেছি। মানুষের এমন দুর্দশা কখেনো কোথাও দেখিনি। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করবে জার্মানি। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আসেম সম্মেলনে আলোচনা করা হবে এবং প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখা হবে। তিনি বলেন, সীমিত জায়গায় এতো মানুষের বসবাস অবাক হওয়ার মতো বিষয়। এভাবে রোহিঙ্গাদের বেশিদিন রাখা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তা প্রশংসনীয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, চার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসেছেন ও তারা খুব অবাক হয়েছেন। এর আগে তারা কখনো এতো কম জায়গায় এতো বেশি মানুষ দেখেননি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আসেম সম্মেলনে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ সফরকারী পাঁচ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা থেকে আসেম সম্মেলনে যোগ দিতে মিয়ানমার যাওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো আসেম সম্মেলনকে মাথায় রেখে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ বা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখা যায় কিনা সেটি নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।

গত শনিবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ১০ সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট ছাড়াও দেশটির ২ জন সিনেটর ও ৩ জন কংগ্রেসের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শনিবার পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি আশ্রয় শিবিরে ৭টি বায়োমেট্রিক কেন্দ্রে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৮ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে।