মানবতাবিরোধীঅপরাধেআমৃত্যু দণ্ডিত আবদুলআলীমের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরেমুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া আবদুল আলীমমারা গেছেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলবিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর সোয়া ১টার দিকে মারা যান তিনি। তার সারা শরীরেক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিলো। কেমোথেরাপি বা ক্যান্সারের অন্য কোনো ধরনেরচিকিৎসা নেয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার ছিলো না।
গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বিএনপির এ নেতাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে গত বছর ৯ অক্টোবর ৮৩ বছর বয়সী আলীমকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩-এর কথা উল্লেখ করে রায়েট্রাইব্যুনাল বলেছে, কোন অপরাধে কী সাজা দিতে হবে, আইন বা বিধির কোথাও তাসুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই। ৮৩ বছর বয়সী আলীম শারীরিকভাবে দুর্বল। তিনিঅন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায়ভুগছেন। মানসিক বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় না। আলীমহিসাব কষে শ শ মানুষকে মৃত্যুর মুখে দাঁড় করিয়েছেন, বর্বরতম পরিকল্পনারসাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু আইনের অক্ষর তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা উপেক্ষাকরে নির্দয় হতে পারে না। এজন্য মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য অপরাধ করার পরও তারসাজা লাঘব করা হলো।
চূড়ান্ত আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, প্রথম অভিযোগে দেশান্তরে বাধ্য করারদায়ে আবদুল আলীমকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো। ৬, ৭, ৯ ও ১২ নাম্বার অভিযোগেহত্যার উদ্যোগ ও সহযোগিতার দায়ে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো। ২, ৮, ১০ ও১৪ নাম্বার অভিযোগে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যার দায়েজীবনের বাকি সময় তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুনা হওয়া পর্যন্ত আলীমকে কারাগারে থাকতে হবে। আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দেয়ায়এর সাথে ২০ ও ১০ বছর কারাদণ্ডের সাজা একীভূত হয়ে যাবে। প্রমাণিত না হওয়ায় ৩, ৪, ৫, ১১, ১৩, ১৫, ১৬ ও ১৭ নাম্বার অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দেয়া হলো।

একাত্তরে কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা আবদুল আলীম মুক্তিযুদ্ধকালেজয়পুরহাটে শান্তি কমিটি গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন ওই কমিটির সভাপতি। স্থানীয়পাট ব্যবসায়ী শাওনলাল বাজলার গদিঘর (বাণিজ্যিক দপ্তর) দখল করে সেখানে তিনিপাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প, শান্তি কমিটির কার্যালয়, রাজাকারদেরপ্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রভৃতি গড়ে তোলেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদসদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে মন্ত্রী করেন।

২০১১ সালের ২৭ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেফতার হওয়া আলীমকে ৩১মার্চ শারীরিক অবস্থার কারণে জামিন দেয়া হয়। বিচারের পুরোটা সময় জামিনেছিলেন তিনি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২২ সেপ্টেম্বর রায় অপেক্ষমাণ রেখেআদেশ দেয়ার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোরনির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি বিএসএমএমইউর কারাকক্ষে ছিলেন।