মাদকাসক্ত পিতাকে পিটুনির পর পুলিশে দিলো ছেলে

 

স্টাফ রিপোর্টার: মাদকাসক্ত ছেলেকে পুলিশে দেয়ার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এবার উদাহরণ হলো মাদকাসক্ত পিতাকে ধরে পিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে ছেলে। গতরাত ১০টার দিকে মাদকাসক্ত পিতা শহিদুলকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। একই সাথে মাদক বিক্রেতা চিহ্নিত বাবলুকে ধরেও পিটুনি দেয়া হয়। পিটুনির এক পর্যায়ে সে পালিয়ে রক্ষা পায়।

পিটুনির সময় চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা ও মাদকাসক্ত বাবলু বলে, পুলিশসহ অনেকেরই মাসে মাসে টাকা দিয়ে হেরোইন বিক্রি করা হয়। আমাকে ধরে মারছো শুনলে টিএসআই খায়ের তোমাদের কাউকে ছাড়বে না। এ উক্তিতে প্রতিবাদী যুবকদের মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায়। পিটুনির এক পর্যায়ে বাবলু বসে পড়ে। তখনও সে অভিন্ন উক্তি আওড়াতে থাকে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাবলুকে পুলিশে না দেয়া হলেও শহিদুলকে দেয়া হয়েছে। শহিদুলের ছেলে কালু বাদী হয়ে গতরাতেই তার মাদকাসক্ত পিতার বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া করে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা লেখার কাজ চলছিলো।

জানা গেছে, শিপরা নামের এক মহিলা দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যাও অনেক। এক সময় আলোচিত শিপরা হকপাড়ায় মারণনেশা হেরোইনের আখড়া বসায়। সেখান থেকে উৎখাতের পর শান্তিপাড়ায় বসবাস শুরু করে। সেখানেও মাদকের আখাড়া বসায় সে ও তার স্বামী বাবলু। সম্প্রতি অবশ্য মাদকের আখড়া জমিয়েছে মুসলিমপাড়ায়। এ আখড়ায় বসে মারণনেশা হেরোইন সেবন করে দক্ষিণহাসপাতালপাড়ার শহিদুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার হেরোইন সেবন করে বাড়ি ফিরে শহিদুল তার স্ত্রী ঝর্ণাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনাটি ঘটে বিকেল ৪টার দিকে। ঝর্ণা খাতুনকে উদ্ধার করে তার সাবালক ছেলে কালু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। মাদকাসক্ত পিতাকে খুঁজতে থাকে। মাদকের আখড়াতেও খুঁজতে যায় কালুসহ তার বন্ধুরা। সেখানে না পেলেও গতরাত ১০টার দিকে হাসপাতাল এলাকায় শহিদুল ইসলাম ও বাবলুকে পেয়ে কালুসহ তার সাথে থাকা লোকজন আটক করে। মারপিট শুরু করে। শহিদুলকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। মারপিটের সময় বাবলু প্রকাশ্যে গলা ফাটিয়ে বলে, আমরা পুলিশকে মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েই হেরোইন বিক্রি করি। আমাদের কেউ কিছু বললে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশেই ব্যবস্থা নেবে। আমাকে মারছে শুনলে টিএসআই খায়ের বসে থাকবে না। তোমাদের ধরে নিয়ে যাবে।

বাবলুর কথা শুনে স্থানীয়রা হতবাক হলেও অবিশ্বাস করেনি কেউ। কারণ পুলিশ ওদের ধরে না। কেনো ধরে না, তা এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আর অজানা নয়। বাবলু পিটুনির এক পর্যায়ে অবশ্য পালিয়ে রক্ষা পায়। ঝর্ণা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। ছেলে কালু তার পিতা সিরাজুলকে শুধু পুলিশেই দেয়নি, নিজেই বাদী হয়ে মামলার উদ্যোগ নিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কালু বলেছে, আমার আব্বা দীর্ঘদিন ধরে হেরোইনে আসক্ত। বহুভাবে চেষ্টা করেও তাকে মাদমুক্ত করতে পারিনি। এবার আমার মাকে মেরেছে। আর একটু হলে মা মারাই যেতো। পুলিশে দিয়ে দেখি আব্বাকে সুস্থ করে ফেরাতে পারি কি-না!