মাথাভাঙ্গা নদীর বুকে শোভা পাচ্ছে বাঁধ : দেখার কেউ নেই!

দীর্ঘদিন ধরে অব্যহত বাঁধ থেকে ফয়দা লুটছে দখলকারীরা : অভিযোগ এলাকাবাসীর

তাছির আহমেদ: মাথাভাঙ্গা নদীর বুক থেকে কোমর অপসরণ না করার ফলে এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাঁধের সংখ্যা। দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত এসব বাঁধ নদী থেকে উচ্ছেদ না করায়, মৎস্য অফিস কর্মকর্তাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকাটা এলাকার মানুষ ভালো চোখে নিচ্ছে না। দখলকারীরা এসব বাঁধ ও কোমর থেকে ফায়দা লুটছেন এ অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া গেছে, ১৮৭০ সালে ড. থমাস হ্যাম বিশেষ জরিপ শেষে এশিয়াটিক সোসাইটির কার্য বিবরণীতে বলেন, ভগিরথী ও ভৈরবের মধ্যবর্তী জায়গা কালক্রমে নদীবাহিত পলিমাটিতে ভরাট হওয়ার কারণে পদ্মা পূর্বদিকে সরে গিয়ে মাথাভাঙ্গার সৃষ্টি হয়। এর উৎপন্ন মুখ বা মাথা মূলপদ্মার সাথে ভেঙে যাওয়ার কারণে এ নদীর এরূপ নামকরণ করা হয়। পক্ষান্তর মতান্তরে এর স্রোতস্বিনীর কবলে পড়ে বহু জনপদের মাথাভাঙ্গার কারণে এরূপ নামকরণ করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান এবং পদ্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা এ মাথাভাঙ্গা নদী, বৈচিত্রপূর্ণ গতি নিয়ে চুয়াডাঙ্গার বুকচিরে প্রবাহিত হয়ে দামুড়হুদা উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে ভারতের নদীয়া জেলায় প্রবেশ করেছে। ১৯৭১ সালেও দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পয়েন্টে মাথাভাঙ্গার পানি প্রবাহের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো ১২ হাজার ৯০০ কিউসেক। কিন্তু বর্তমান তার এ দূরাবস্থার সুযোগে এক শ্রেণির দুষ্কৃতীকারী মানুষের দল শুধু তাদের সুবিধাভোগের জন্য এ মাথাভাঙ্গা নদীর এ পার থেকে ওপার পর্যন্ত বাঁশ, চটায় আর কারেন্ট জালের বাঁধ দিয়ে মাছের বংশকে ধ্বংস করছে এবং সেই সাথে নদীর পানি চলাচলে সম্পূর্ণরূপে বাধা সৃষ্টি করছে। এই বাঁধের ফলে পলিতে আর বালিতে জমাট বেঁধে দিনদিন ভরাট হচ্ছে এ নদীর তলদেশ। মাথাভাঙ্গা নদীতে দুষ্কৃতীকারীর দল দীর্ঘদিন ধরে নদীর বুকে অব্যাহত রাখলেও তা উচ্ছেদের কোনো প্রয়োজনবোধ মনে করছে না মৎস্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দানা বেধেছে। মাথাভাঙ্গা নদী থেকে অবৈধ বাঁধ ও মাছ ধরার কোমরসহ সকল প্রকার কারেন্ট জাল অতিসত্ত্বর উচ্ছেদ করে নদীতে পানি চলাচলের গতি স্বাভাবিক এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট এলাকার মানুষ জোর দাবি জানিয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলায় একাধিক বাঁধ থাকায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলীর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের অবগত আছে। তবে সময় সুযোগের অভাবে তা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, নদীতে বাঁধ, কোমর ও কারেন্ট জালের জোংড়া দিয়ে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। মাথাভাঙ্গা নদীতে এসব অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করে নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের  বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকায় উপজেলা প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।