মাইকের শব্দ নিয়ন্ত্রণে গাংনীতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

গাংনী প্রতিনিধি: মাইক/লাউডস্পিকারের শব্দ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে গাংনী উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। গতকাল রোববার দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা শেষে মাইকি বাজানোর বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। প্রশাসনের পদক্ষেপের ফলে গত দু দিন মাইকের উপদ্রপ থেকে রক্ষা পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন গাংনী পৌরবাসী। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম, গাংনী প্রেসক্লাব সভাপতি রমজান আলী, ডেকেরেটর মালিক, ক্লিনিক মালিক, গাংনী বাজার কমিটি প্রতিনিধিসহ মাইকে প্রচার সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
পরিবেশ আইনের আলোকে এ উপজেলায় যেকোনো প্রচার-প্রচারণাসহ অন্যান্য কাজে মাইক/লাউডস্পিকারে বাজানোর জন্য তিন দিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাবর আবেদন করতে হবে। ইউএনও লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে মাইক বাজানো যাবে। তবে অবশ্যই শব্দের নির্ধারিত ডেসিবেল মেনে চলতে হবে। ইউএনও অনুমতি সাপেক্ষে গাংনী পৌরসভা এলাকার জন্য মাইক বাজানোর নির্ধারিত সময় হচ্ছে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সময়ের বাইরে কোনো অবস্থায় পৌর এলাকায় মাইক বাজানো যাবে না। প্রচারের একটি ভ্যান কিংবা যানবাহনে দুটি হর্ন ব্যবহার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী একটি হর্ন এবং তা ছোট আকারের হতে হবে। চোঙ্গাযুক্ত হর্ন ব্যবহার করা যাবে না। গাংনী পৌরসভাসহ এ উপজেলার মসজিদ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় পৌঁছুলে মাইক বন্ধ রাখতে হবে।
এদিকে আলোচনা সভার শুরুতেই মাইকের উচ্চ শব্দের বিষয়ে পরিবেশ আইন মেনে মাইক চালানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউএনও এবং ওসি অটুট ছিলেন। জনস্বার্থের হানি করে কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। একই সাথে সাংবাদিকসহ উপস্থিত প্রায় সকলেই মাইক বাজানোর দৌরাত্ম্যের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন। মাইক বাজানোর বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত উপস্থিত ডেকোরেটর মালিকসহ সবাই মেনে চলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকালের সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কেউ মাইক বাজায় তাহলে পুলিশ তাকে আটক করবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার ছাড় দেয়ার কোনো কারণ নেই। অনুমতি বিহীন মাইক প্রচারে রাস্তায় বের হলেও তাকে আটক করা হবে। এজন্য প্রচার কিংবা অন্যান্য কাজে মাইক ব্যবহার করার সময় অনুমোদনপত্র রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এর পরে যদি কেউ আইন লঙ্ঘণ করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তাহলে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে। তবে কোনো এলাকায় মাইকিং চলাকালে যেকোনো ব্যক্তি অনুমোদন দেখতে চাইতে পারেন। অনুমতি বিহীন কেউ মাইকিং করছে কি-না সে বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য এলাবাসীকে পরামর্শ দিলেন ইউএনও।
প্রসঙ্গত, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যেখানে সেখানে উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর ফলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন গাংনী পৌরবাসী। এ বিষয়ে গত শুক্রবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘মাইকের শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ গাংনী পৌরবাসী ॥ কয়েক যুবকের প্রতিরোধ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই দিনই গাংনী শহর থেকে কাশেম মাইকের ৫টি প্রচার ভ্যানসহ মাইক জব্দ করে গাংনী থানা পুলিশ। আইন মেনে মাইক চালানোর মুচলেকা দিয়ে মাইক ফেরত পায় কাশেম মাইক। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও পুলিশ-ইউএনও উদ্যোগে আশার আলো দেখছিলেন ভুক্তভোগী পৌরবাসী। পুলিশের অভিযানের পর থেকে পৌর এলাকায় মাইকের দাপট দেখা যাচ্ছে না। গতকাল রোববার দিনব্যাপী মাইকিং হয়নি। প্রশাসনের এই শুভ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পৌরবাসী। এই নির্দেশনা প্রতিপালনে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তারা।