মহেশপুরে নির্যাতিত গৃহবধূ পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন

 

 

ঝিনাইদহ অফিস: কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের সেই গৃহবধূকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। মহেশপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, গতকাল রোববার দুপুরে মহেশপুর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকায় তার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে। তিনি আরো জানান, উদ্ধারের পর তাকে পুলিশ প্রহরায় মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

গত শনিবার প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে যান নির্যাতিত সেই গৃহবধূ। এদিকে গ্রাম্য সালিস ডেকে নির্যাতন করা মাতবর শফিউদ্দীনসহ ছয় আসামিকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। গ্রেফতারের ভয়ে আসামিদের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আসামিরা নির্যাতিত গৃহবধূকে চরিত্রহীন ও চোর হিসেবে সাব্যস্ত করে মামলা থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন মহলে তদবির শুরু করেছেন।

মহেশপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন গ্রামে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এদিকে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা বেগম রোববার মহেশপুর হাসপাতালে নির্যাতিত গৃহবধূর চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের নিদের্শ দেন। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এখলাস উদ্দীন জানান, নির্যাতিত মহিলার হাত এবং পায়ে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে। এক্সরে করে তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ জানান, নির্যাতিত গৃহবধূ ও পরিবারকে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। দু পক্ষ তার কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। তিনি আরো জানান, কেউ দোষ করলে দেশে প্রচলিত আইন আছে। এভাবে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয়া চরম অপরাধ হয়েছে। তিনি দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকালে মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে এক গৃহবধূর ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালানো হয়। তাকে প্রকাশ্যে গ্রাম্যসালিস বসিয়ে বাঁশের সাথে বেঁধে রেখে বেধড়ক মারপিট করে তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। খবর পেয়ে মানবাধিকারের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কিন্তু প্রাণনাশের হুমকিতে শনিবার দুপুরে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যশোরের পালবাড়ি এলাকায় তার এক নিকটাত্বিয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন নির্যাতিত গৃহবধূ। এ ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়।