মহাজোটের শরিকরা সংসদ ভাঙার পক্ষে

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদ ভেঙে নির্বাচনের চিন্তাভাবনা চলছে মহাজোটেও। এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন। ৯ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। এরপর ১৪ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সচিব সভায় বলেছেন, আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে। এ সময়ে সংসদ বহাল থাকবে, তবে অধিবেশন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহাজোট নেতারা বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি সংবিধানের বাইরে কিছুই বলেননি। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকেই সংসদ ভেঙে নির্বাচনের পথে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয় না। তাই নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজনও হবে না। তার বিশ্বাস, নির্বাচনের ৪৫ দিন আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানের ভেতরে থেকেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার তিনি সংসদ না ভাঙার কথাও বলেননি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেননের কথা হয়েছে। তার বদ্ধমূল ধারণা, সংসদ ভাঙার পরেই নির্বাচনের পথে এগোবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সংসদে এক ভাষণে সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দেন মেনন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ ভেঙে নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দর-কষাকষির বিষয়ও জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন। তার ভাষায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে সংসদ ভেঙে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনাই বেশি। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। তিনি রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ১৪ দলের বৈঠক আয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের সভা ডাকার প্রস্তুতি রয়েছে। এরপর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলেই সংবিধানের ভেতরে থেকে সংসদ ভাঙার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানাতে পারেন। মহাজোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মনে করছেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদ ভাঙার কথা বলেছেন। এখন বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার প্রত্যাশা রেখে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের কথা বলছেন বলে ব্যারিস্টার আনিসের বিশ্বাস। তার ভাষায়, প্রধানমন্ত্রী অপশন খোলা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমঝোতার পথ বন্ধ করেছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, আলোচনার পথ অবশ্যই বন্ধ হয়নি। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, সমঝোতার পথ কখনও বন্ধ হয় না। আলোচনার পথ খোলা আছে এবং থাকবে। একই মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান বিপরীতমুখী। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরকারের মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনে নির্বাচনের কথা বলা হলেও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে বিএনপি। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন না।