মন্ত্রী বিচারপতি সিইসির বাসা ও পুলিশ অফিসে ককটেল হামলা

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীতে মন্ত্রী, বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বাসভবন এবং পুলিশ কর্মকর্তার অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গতকাল দুশর বেশি ককটেল হামলা চালানো হয়েছে। বিজয়নগরে পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষে ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রায়েরবাগ, মালিবাগ, বাসাবো, গাবতলী, মিরপুর, পল্লবী, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে ১৩টি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার ভোর থেকেই বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পুলিশ ১১টি ককটেলসহ ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বারিধারায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের বাসভবন লক্ষ্য করে ককটেল ছুঁড়ে মারা হয়। ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতাল সংলগ্ন ৫ নম্বর রোডে সকালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদের বাসার সামনে পর পর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। ধানমন্ডি থানার ওসি মাসুদ করিম জানান, পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলের আলামত সংগ্রহ করে। রাত পৌনে ৮টায় ইন্দিরা রোডে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বাসভবনের পেছনে দুটি ককটেল মারা হয়। সকাল ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহার বাসভবনের দেয়ালে কে বা কারা একটি ককটেল ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। ককটেলটি দেয়ালে লেগে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ঘটনার সময় জাজেজ কমপ্লেক্সে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ছুটে আসার আগে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিচার বিভাগ যে স্বাধীনভাবে কাজ করছে, তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যই এ হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, ঘটনার পর জাজেজ কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিচারপতির বাসভবনে ককটেল হামলার আধা ঘণ্টা পর বিজয়নগরে স্কাউট ভবনের পাশে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে পর পর ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকজন দুর্বৃত্তরা হঠাত করে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। বিকট শব্দে ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকা থেকে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পল্টন থানায় নিয়ে যায়।

এর কিছু সময় পরেই মতিঝিল সিটি সেন্টারের সামনে ৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরামবাগে আরো দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে মিরপুরগামী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নীরব, সাইফুল, খালেক ও খোকা নামে ৪ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা সবাই ছাত্রদল কর্মী।

সকালে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। দুপুরে কলাবাগান মাঠের কাছে একটি প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে একটি বোমা ছুঁড়ে মারলে প্রাইভেটকারে আগুন ধরে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। একই সময়ে রামপুরায় টেলিভিশন ভবনের সামনে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিকেল তিনটার দিকে পুরানা পল্টনে প্রীতম হোটেলের পাশে জেএফসি রেস্টুরেন্টের সামনে পর পর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। বেলা আড়াইটার দিকে গুলশান-২ এ শিবির মিছিল বের করে বেপরোয়াভাবে গাড়ি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। একই সময়ে বিজয়নগরে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে। একই সময়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে শিবির মিছিল বের করলে সেখানে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। বিকেলে পল্লবী এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের বাসার সামনে ৬টি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। রাত ৮টার দিকে গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন জানান, শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যায় বাসাবোর ইত্যাদি মাঠে একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দিলে চালক অগ্নিদগ্ধ হন। গাবতলীর বেড়িবাঁধে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মিরপুর-২ নম্বর সেকশনে সনি সিনেমা হলের সামনে গুলিস্তান-চিড়িয়াখানা রুটের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে পল্লবীতে সন্ধ্যায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে নিভিয়ে ফেলে। রাত ৮টার দিকে লালমাটিয়ায় যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসা লক্ষ্য করে চারটি ককটেল ছুঁড়ে মারা হয়। ককটেলগুলো বাসার সামনে পড়ে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে, দয়াগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয় লক্ষ্য করে দুটি পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। বোমা দুটি ২ জন পথচারীর গায়ে লেগে বিস্ফোরিত হয়। তারা দুজন গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন জাতীয় কৃষক পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আকাশুর রহমান আকাশ (৩০) ও হকার সিরাজুল ইসলাম (৩৫)। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।