মন্ত্রিপরিষদ গঠন প্রত্যাখ্যান

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভা প্রত্যাখ্যান করেছে বিভিন্ন ইসলামপন্থি দল। তারা বলেছে, এ শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল চূড়ান্ত করছেন। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা অবৈধ, বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থি। ভোটারবিহীন, গণপ্রত্যাখ্যাত তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে তথাকথিত দশম সংসদের সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এ সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আওয়ামী লীগ ও তাদের কয়েকটি পকেট সংগঠন জবরদখল করে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্বাচনের নামে নাটক করে সংসদ তৈরি করেছে। এ সংসদ ও সরকার বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কোনো প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি বলেন, জনগণ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশ-বিদেশে এ সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নবম জাতীয় সংসদ আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। নবম সংসদ বহাল থাকাকালে দশম সংসদ গঠিত হতে পারে না এবং অবৈধ দশম সংসদ সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠনের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, প্রার্থী ও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন শেষে শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল চূড়ান্ত করলেন। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া আজ্ঞাবহ বিরোধীদল দিয়ে দেশ পরিচালনার নিকৃষ্ট অভিলাষ এ দেশের গণমানুষের প্রতি আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের অশ্রদ্ধারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। তারা বলেন, সরকারি দল নিজেদের একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতায় সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানের কোনোরূপ প্রচেষ্টা না করে জনগণের ওপর জোরজবরদস্তিমূলক যে বাকশালী শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে, তা কখনওই সুফল বয়ে আনবে না, বরং এতে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরও দীর্ঘায়িত হবে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, মানবাধিকার, ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থায়ও এর কুপ্রভাব পড়বে। তারা বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সম্মত নয়। গণমত এবং অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। কাজেই অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন ছাড়া গঠিত সংসদ সত্যিকার অর্থে বৈধ হতে পারে না এবং তা সার্বভৌম হতে পারে না। এ ধরনের সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা বলেন, অবাধ, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া সরকার গঠিত হলে দেশবিরোধী অপশক্তি অবৈধ, অনাকাঙিক্ষত হস্তক্ষেপের সুযোগ পায় এবং দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে নির্বাচন বলতে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকেই বোঝানো হয়েছে। যদি প্রার্থীরা শক্তি, অর্থ এবং সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচিত হন, তবে ওই সব সংসদ সদস্যকে জনগণের প্রতিনিধি বলা যায় না এবং সংবিধানের ৬৫(১) অনুচ্ছেদের আলোকে এ ধরনের সংসদকে সংসদ বলা যায় না। এ ধরনের সংসদ আমাদের পূর্বপুরুষ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আশা-আকাঙক্ষারও পরিপন্থি। প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত গণবিচ্ছিন্ন ও গণধিকৃত এ সরকার শুধু দেশের মানুষের সঙ্গেই উপহাস করছে না, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে।