মন্তব্য প্রতিবেদন…………………………………….

সন্তানের অধিকার অস্বীকার করার সুযোগ কারো নেই
রফিকুল ইসলাম: যে পিতা কিছুদিন আগেও আদর সোহাগে আগলে রাখতো শিশু সন্তান সোহেব হাসানকে, সেই পিতা নতুন সংসার পেতে বদলে গেছে তা বুঝবে কীভাবে? কিছুদিনের বিরতির পর যখনই ১১ বছরের সোহেব হাসান তার বাবা লালনকে দেখেছে চুয়াডাঙ্গার সমবায় নিউ মার্কেটে তখনই আব্বু বলে ডেকে কাছে পাওয়ার আবদার করেছে। এ আবদার কি অন্যায়? চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারে নিচের বাজারের লালন বীজভা-ার নামক দোকানের স্বত্বাধিকারী ফার্মপাড়ার লালন তার সন্তানের আব্বু ডাকে ক্ষুব্ধ হয়ে যখন শিশু সন্তানকে মারতে শুরু করেছে তখন পাশে থাকা গর্ভধারিণী মা কি নীরব থাকতে পারেন? ঠেকাতে গিয়ে তিনিও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মা ছেলে দুজনকেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গার শেষ পাতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিবেকবানদের কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছে নিশ্চয়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যখন নিউ মার্কেটে লালন তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানকে মারধর করে তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে রুখে দাঁড়ান তারা। জনরোষে পড়ে লালন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে রক্ষা পায়।
দাম্পত্য বিচ্ছেদ কখনও কখনও কোনো কোনো দম্পতির ক্ষেত্রে অনিবার্য হয়ে ওঠে। এর আড়ালে অনেক কিছুই থাকে। স্থান-কাল-পাত্র-পাত্রী ভেদে ব্যাখ্যা ভিন্ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোঝাপড়ায় ঘাটতির সুযোগে তৃতীয়পক্ষের প্রভাবই পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করতে দেখা যায়। নারী কিংবা পুরুষ দুজনের যার দোষেই হোক, দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর তাদের সন্তানের অধিকার বঞ্চিত করার অধিকার কোনো পিতা-মাতার নেই। যদিও আমাদের সমাজে শিশু অধিকার শতভাগ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তেমন পরিবেশ গড়ে তোলাও এখন অলিক স্বপ্ন। তবে শিশু মনে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়লে তার কুফল যে সমাজের ওপরই পড়ে তা নানভাবেই পরীক্ষিত। সে হিসেবে সন্তান যারই হোক, তাকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব সকলের। যদিও শিশুকালে তার পরিবারের বড়দের আচরণ দেখে যা শেখে সেই প্রভাব ওই শিশুর মধ্যে কম-বেশি সারাজীবনই থেকে যায়। সমাজে বড় ধরনের অপরাধমূলক ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশের শৈশব পর্যালোচনা করলে এর প্রমাণ মেলে। তাহলে যে শিশু তার আব্বুকে আব্বু বলে ডেকে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই শিশুর সফেদ মগজে কতোটা হিংসার ছাপ পড়লো তা উপলব্ধি করলেই কি গা শিউরে ওঠে না? যদিও মায়ের ¯েœহে ওই ছাপ মুছে যাবে বলে বিশ্বাস।
উন্নত বিশ্বে শিশু তার পিতা-মাতার বিরুদ্ধে নির্যাতন দূরের কথা অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুললে প্রথমেই পিতা-মাতার শৈশব খতিয়ে দেখে শিশুর মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এরপর শিশুর পিতা-মাতাকে নিয়ে প্রয়োজন হলে মানসিক চিকিৎসক কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কেন্দ্রে নেয়া হয়। পিতা-মাতার সুস্থতা যাচাইয়ের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কারো শৈশবে ওই হিংসার প্রভাব থাকলে তা দূর করতে বোঝানোর ব্যবস্থা করা হয়। আর বিচ্ছেদ? ওরকম কিছু হলে শিশুকে নেয়া হয় নিরাপদে সুস্থ সুন্দর মনের মানুষ হওয়ার সরকারি কেন্দ্রে। আমাদের সমাজে ওসব এখনও পর্যন্ত অসম্ভব। বিষয়টি অতিবগুরুত্বপূর্ণ। ফলে শিশুদের প্রতি পিতা-মাতার যতেœ ঘাটতি হওয়ার ন্যূনতম শঙ্কায় ওদের নিরাপদে সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা দরকার। তার আগে দরকার, যে পিতা তার সন্তানের আবদারে সাড়ার বদলে হিং¯্র হয়ে ওঠে সেই পিতার উচিত শাস্তি। যে সন্তানের ডাকে সাড়া না দিয়ে অমানবিক আচরণ করেছে তার শাস্তির পাশাপাশি তার শৈশবও খতিয়ে দেখা উচিত।