মধ্য নভেম্বরে তফসিল : ডিসেম্বরে ২৪৫ পৌর নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার: পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মধ্য নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন করতে চায় ইসি। এ লক্ষ্যে দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচনের নতুন আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনাবিধি প্রণয়নের কাজ করছে ইসি। এতে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সাথে সিটি করপোরেশনের মেয়র, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদেরকে নির্বাচনী প্রচারের বাইরে রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য নিবন্ধিত দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চিঠি বাধ্যতামূলক করা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংশোধিত নতুন আচরণবিধিতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুত্সা রটনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
২৪৫ পৌর এলাকায় সম্ভাব্য ভোটার ৭৫ লাখের মতো। কেন্দ্র ৩ হাজার। সংসদ নির্বাচনের সাথে এ নির্বাচনের সাদৃশ্য থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কমিশন সদস্য ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। আগের দিন জারিকৃত স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন অধ্যাদেশের গেজেট দুপুরের পরে কমিশন কার্যালয়ে পৌঁছায়। এর আগে আচরণবিধি নিয়ে বৈঠক করেন চার কমিশনার। এরপর বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পুনরায় কমিশনের সদস্যরা বৈঠকে বসেন। আজ বুধবার অথবা কাল বৃহস্পতিবার আচরণবিধি চূড়ান্ত হবে। এরপর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন করার অধ্যাদেশের গেজেটে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী যাকে রাজনৈতিক দল মনোনয়ন দেয়নি তাকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী বোঝাবে। তাই স্বতন্ত্র হিসেবে যে কারো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
ব্যালটের আকার নিয়ে দুশ্চিন্তা: পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটের আকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ইসি। অন্যবারের তুলনায় এবার ব্যালটের আকার অনেক বেড়ে যাবে। দেশের নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে ইসি সচিব জানিয়েছেন, পৌরসভার মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর -এই তিন পদেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ব্যালটের আকার অনেক বড় হয়ে যাবে। ব্যালট ভাঁজ করা, সিলমারাসহ পুরো প্রক্রিয়াতেই স্বাচ্ছন্দ্যের সমস্যা আছে। এতে ভোটাররাও স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না। সরকারি প্রেসগুলোর সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অধ্যাদেশে যা আছে: আইনে ২ ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল মানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (সংসদ নির্বাচন আইন) সংজ্ঞায়িত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। নতুন আইন সংশোধনের পর অধ্যাদেশে রাজনৈতিক দল বলতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো দলকে বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এরূপ কোনো প্রার্থী, যিনি কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনয়নপ্রাপ্ত নন। এ ছাড়া ২০ ধারা সংশোধন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
আচরণবিধিতে যা থাকছে: খসড়া আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সরকারি কর্মসূচিতে গিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। এসব ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে সরকারি গাড়ি ব্যবহার বা অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এবং ভোট দেয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সম মর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিধিনিষেধ তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচন এলাকার কোনো ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ডে, বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে এবং তা কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হলে কমিশন সেই ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রার্থী নিজের ছবি ও প্রতীক ব্যতীত অন্য কারো ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী পোস্টার বা লিফলেটে দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন।
পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। তবে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃস্টি করে কোনো ধরনের পথসভা বা সভামঞ্চ তৈরি করা যাবে না। পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে প্রস্তাবিত সভার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসভার সুযোগ থাকলেও দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনসভা আয়োজনের সুযোগ রাখা হয়নি।