মধ্যযুগিও বর্বরতাকেও হার মানিয়েয়েছে ইকরা গং : রশি দিয়ে বেঁধে মাথায় শাবল গেঁথে খুন

চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় জমি নিয়ে দু’পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধের জের : আপোসের কথা বলে ডেকে নিয়ে নৃশংসতা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়ায় যুবদল নেতা ইকরামুল হক ইকরাসহ তার লোকজন মধ্যযুগিও বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। জমি জমা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ মধ্যবয়সী আশরাফ উদ্দীনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথায় শাবল গেঁথে নৃশংসভাবে খুন করেছে ওরা। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিরোধপূর্ণ জমিতে উভয়পক্ষের বাগবিতণ্ডার পর দুপুরে আপোসের কথা বলে ডেকে নিয়ে একটি বাড়িতে বেঁধে নির্যাতনের পর রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়। পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে হামলায় আহত হয়েছেন এক মেয়েসহ দু ছেলে।
মৃত আতর আলী ম-লের ছেলে আশরাফ উদ্দীনের (৫০) মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আজ রোববার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। দুপুরে মৃতদেহ নিজ গ্রাম গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ায় নিয়ে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতে পারে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারুক ও আলাউদ্দীন আলা নামের দুভাইকে ধরে থানায় নিয়েছে। এরা মৃত ইদবার আলী ইদুর ছেলে। পুলিশ বলেছে, যেহেতু মামলা হয়নি সেহেতু এরা আসামি কিনা তা বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে এদেরকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আশরাফ উদ্দীনের মেয়ে মাসুরা (২০) বলেছেন, গ্রাম সংলগ্ন কুশোগাড়ি মাঠের দু বিঘা জমি নিয়ে বহুদিন ধরে গ্রামেরই মকছেদ ম-লের ছেলে ইকরামুল, মণ্টু ও ঝণ্টুদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে মামলাও চলছে। জমিতে আদালত ইনজাংশন জরি করে রেখেছে। এরপর গত দুদিন ধরে ওই জমিতে ইকরামুলরা চাষ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। বাধা দেয়া হয়। আজ (শনিবার) সকাল ১১টার দিকে ইকরামুলরা লোকজন নিয়ে মাঠের ওই জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে শুরু করলে আমার আব্বা (আশরাফ উদ্দীন) কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মাঠে গিয়ে বারণ করে। এ সময় ইকরামুলরা বলে, তোমার জমি তার প্রমাণ কি। দলিলপত্র নিয়ে এসো, তোমার সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলবো। দরকার হলে জমির দাম দু লাখ টাকা এখনই দেয়া হবে। এ কথায় কান দিয়ে সরল বিশ্বাসে আশরাফ উদ্দীন জমির দলিল নিয়ে একরামুলদের বাড়ির দিকে যায়। আমরাও সাথে ছিলাম। আমাদের লাঠি শোঠা দিয়ে মেরে তাড়িয়ে দিয়ে আমার পিতাকে দঁড়ি দিয়ে বেধে নিয়ে যায় হাবলুর ছেলে সদর আলীর বাড়ির ভেতর। সেখানে নিয়ে মারতে শুরু করে। আমরা ঠেকাতে গেলে আমাদের মেরে তাঁড়িয়ে দেয়। প্রতিবেশীদের তেমন কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। দূরে দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো পিতাকে মারতে দেখতে হলো আমাদের। মেরে যখন মৃতপ্রায় অবস্থায় রাস্তার ওপর ফেলে ওরা চলে যায়। তখন ছুটে গিয়ে আব্বা জীবিত আছে ভেবে একটি অটোতে তুলতে বলি। অটো চালক না নিয়ে সরে পড়ে। আমার মনে হলো আব্বা পানি চাচ্ছে, পানির জন্য চিৎকার করেও কারো সহযোগিতা পেলাম না। দৌড়ে গিয়ে হাতে করে পানি নিয়ে আব্বার কাছে ফিরে দেখি আব্বার সাড়া নেই। পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছে আশরাফ উদ্দীনের দু ছেলে আরিফ (২৮), শরিফ (২৫) ও মেয়ে মাসুরা বেগম (২০)। পিতার রক্তাক্ত লাশের পাশে মাসুরাসহ নিকটজনদের আহাজারির এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে পৌছায় পুলিশ। সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমির আব্বাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে দেখেন ওই সদর আলীর বাড়ির ভেতরে গবর-কাদা দিয়ে নেমে রক্তের দাঁগ মুছে দে
করে আসছে।
য়া হয়েছে। এরপর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তোজাম্মেল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছান। সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) আহসান হাবীব ঘটনাস্থলে পৌছে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেয়া হয়। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে লাশ ভ্যানযোগে হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। গতকাল ময়নাতদন্ত করা সম্ভব না হওয়ায় আজ রোববার তা করা হবে। অপরদিকে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছুনোর পূর্বেই রসুল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সরে পড়েছে।
আশরাফ উদ্দীনের দু ছেলে আরিফ, শরিফ ও মেয়ে মাসুরা বেগম অভিন্ন ভাষায় বলেছে, একরামুল হক ইকরার নেতৃত্বে তার দু’ভাই মণ্টু, ঝণ্টু ও নূরনগরের রসুলসহ তাদের লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে আমাদের আব্বাকে খুন করেছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে ইকরামুল হক ইকরা লোকজনকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বেধে নির্যাতন করে হত্যা করলো অথচ পুলিশ ওদের কাউকে ধরতে পারলো না। গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছে, আশরাফ উদ্দীন ছিলো দরিদ্র। গ্রামের সকলের সাথেই ভালো সম্পর্ক ছিলো। শুধু ওই ইকরামুল তার ভাইদের সাথেই বিরোধ চলে আসছিলো বহুদিন ধরে। আশরাফ উদ্দীনের মা টাকা নিয়ে জমি দিয়েছে বলে ইকরারা দাবি করলেও আশরাফুলদের দাবি ভুল বুঝিয়ে সাদাকাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে ওই জমি ওদের বলে দাবি