মওদুদ আনোয়ার রফিকুল মিন্টু ৮ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার: ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় বিএনপির ৫ নেতার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। একইসাথে তাদের প্রত্যেককে ৮ দিনের পুলিশি রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। জামিন ও রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম এ আদেশ দেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তিন দিন ও অন্য মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

খাসকামরা থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের দেয়া আদেশ পাঠ করে শোনান আদালত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা। পরে আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। গত ৮ নভেম্বর ঢাকার মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য- সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যবসায়ী নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী অ্যাড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ডিবি পুলিশের কার্যালয় থেকে আদালতে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। একইসাথে রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন। সেই মোতাবেক গতকাল এ ৫ নেতাকে আদালতে হাজির করা হয়।

বিএনপি নেতাদের আদালতে হাজির করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, দু মামলার একটিতে সেন্টু নামের এক আসামি ঢাকা মহানগর দায়রা জজের আদালতে জামিন চেয়েছেন। এ কারণে ওই মামলার নথি জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। নথি না থাকায় মহানগর হাকিম ওই মামলার শুনানি মুলতবি করে অন্য মামলার শুনানি শুরু করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হৈ চৈ শুরু করেন এবং পরে তারা হাকিমের কাছে ১৫ মিনিট সময় চেয়ে নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যান। বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা নথি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর জন্য দায়রা জজ জহুরুল হকের কাছে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। সংশ্লিষ্ট আদালতের পুলিশের মাধ্যমে জজ আদালত থেকে নথি ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের কাছে পাঠানো হয়।

দুপুর পৌনে ১২টা থেকে দু মামলায় রিমান্ড ও জামিনের আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু এবং ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি খন্দকার আব্দুল মান্নান। আসামিপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল অ্যাড. এজে মোহাম্মদ আলী ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, অ্যাড. জয়নাল আবেদীন, অ্যাড. গোলাম মোস্তফা খান, অ্যাড সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাড. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ মিয়া আলম প্রমুখ।

শুনানির শুরুতেই মাসুদ আহমেদ তালুকদার পাঁচ বিএনপি নেতার বয়স, অসুস্থতা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে জামিনের আবেদন জানান। সানাউল্লাহ মিয়াও পাঁচ নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং জামিন চান। এরপরই আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদেরকে হেয় ও হয়রানি করার জন্যই এসব মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা অসৎ উদ্দেশে দায়ের করা হয়েছে। কারণ এসব মামলায় আমাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পাঁচ নেতাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদনের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। হরতালে যেসব গুলি হচ্ছে তা সরকার করাচ্ছে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করে শালীন ভাষায় শুনানি উপস্থাপনের পরামর্শ দেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা শুনানির পর মহানগর হাকিম মো. রেজাউল করিম আদেশ পরে দেবেন বলে এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান। এর ১০ মিনিট পর আদালতের সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত আইনজীবীদের সামনে এক মামলায় পাঁচ দিন, অন্যটিতে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ পড়ে শোনান। এ সময় এজলাস ও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত কয়েকশ’ আইনজীবী বিচারক ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হবার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রেফতার হন মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার ও রফিকুল ইসলাম মিয়া। একই দিন গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেফতার করা হয় আবদুল আউয়াল মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে। গ্রেফতারের পরপর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডস্থ মহানগর গোয়েন্দা দফতরে। মতিঝিল থানায় ৫ নভেম্বর দায়ের করা ১৬ নম্বর মামলা এবং ২৪ সেপ্টেম্বর দায়ের করা ৪৪ নম্বর মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এসব মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ।